ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মায়ের কথা মনে হলে আমার কিছু ভালো লাগে না!

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
মায়ের কথা মনে হলে আমার কিছু ভালো লাগে না! সজীব

রংপুর: মেধাবী শিশুশিক্ষার্থী সজীব পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাসের ফার্স্ট বয় হওয়াতে স্কুলের শিক্ষক তাকে খুব স্নেহ করেন। সহপাঠীরাও তাকে ভীষণ ভালবাসে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলেও তাকে অত্যন্ত আদর করেন। এর পরও সজীবের মধ্যে কী যেন এক শুন্যতা কাজ করে।

একারণে সে স্কুলে বেশিরভাগ সময়ে একাকী থাকতেই সচ্ছন্দ বোধ করে। কী যেন তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।

 তা খুঁজতেই তার এই নিস্তব্ধতা। ছোট অবুঝ হৃদয়ও যেন তাড়া করে ফেরে তার হারিয়ে যাওয়া মাকে ফেরত পেতে। এই হলো রংপুর বদরগঞ্জের রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে হারিয়ে যাওয়া মায়ের সজীব নামের এক অবুঝ সন্তানের মনের আকুতির চিত্র।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (২৪এপ্রিল) সকালে বদরগঞ্জ পৌরশহরের চাঁদকুঠির ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা মেলে সজীবের। আনমনা ভাব নিয়ে সে ক্লাশরুমের এক কোণে বসে আছে।  

তাকে কাছে ডেকে নিলে কথার এক পর্যায়ে ছোট্ট সজীব বলে,আমাদের স্কুলে সব বন্ধুর মা সন্তানদের দেখতে আসেন।  কিন্তু আমার মা আসে না। শুনেছি, আমার মা হারিয়ে গেছে রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে। মাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। মাকে আমার দেখতে ইচ্ছে করলেও মনে হয়, মার আমাকে আর দেখতে ইচ্ছে করে না। এ কথা বলতে বলতেই তার চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়।

শিশু সজীব আরও বলতে থাকে,বাবার কাছে শুনেছি আমার বয়স যখন পাঁচ, তখন আমার মা রাবেয়া বেগম লাইজু রানা প্লাজা ধসে মারা গেছে। আমি আমার দাদা দাদির কাছে থাকি। তারা আমাকে খুব আদর করে। মায়ের কথা মনে হলে আমার আর কিছু ভালো লাগে না।

সজীবের বাবা মোস্তাকিম রহমান জানান,রানা প্লাজা ট্রাজেডির দিনে তিনি টাঙ্গাইলে ছিলেন। সেখান থেকে খবর পেয়ে রানা প্লাজার সামনে চলে এসে স্ত্রী লাইজুকে খুঁজতে থাকেন। একদিন পর অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠচত্বর থেকে স্ত্রীর মরদেহ শনাক্ত করে বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করেন।

তিনি জানান, বিজিএমইএ (বাংলাদেশ পোশক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি) থেকে প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা দেয়া হয়। এর মধ্যে শিশু সজীবের নামে ব্যাংকে ১২ লক্ষ টাকা ডিপোজিট করা হয়। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দেয়া হয় লাইজুর বাবা-মাকে। বাকি টাকা পান মোস্তাকিম নিজে। পোশাক প্রস্তুতকারক সংগঠন থেকে চাকুরি দেয়ার কথা থাকলেও চাকুরি দেয়া হয়নি মোস্তাকিমকে।

তিনি আরও জানান,এছাড়াও সরকারি ও বিভিন্ন সংগঠন থেকেও কিছু অর্থসহায়তা পেয়েছিলেন।

চাঁদকুঠির ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন বেগম জানান,সজীব শান্ত স্বভাবের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। সে ক্লাসের ফার্স্ট বয়।

এ কারণে স্কুলের সব  শিক্ষক তাকে খুব ভালবাসেন। মা-হারা ছেলেটির মনে শুন্যতার বিষয়টি অনুভব করা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘন্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।