ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাতে থামছে না বাল্কহেড, শীতলক্ষ্যায় থামছে না মৃত্যু

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
রাতে থামছে না বাল্কহেড, শীতলক্ষ্যায় থামছে না মৃত্যু অভিযোগ রয়েছে, বাল্কহেড বা সুকানির বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয় নৌপুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী নৌকাডুবিতে ঝরে গেলো আরও পাঁচটি প্রাণ। মাঝি ও ১৪ যাত্রীবাহী নৌকাটি ডুবে যায় বালুবাহী নৌযানের (বাল্কহেড) ধাক্কায়। ১০ জন সাঁতরে কূলে ফিরতে পারলেও পারলেন না পাঁচজন। শুক্রবার (২৩ মার্চ) রাতের দুর্ঘটনার পর শনিবার (২৪ মার্চ) রাতে একজনের এবং রোববার (২৫ মার্চ) সকালে হতভাগ্য বাকি চারজনের মরদেহ পাওয়া যায়।

এই দুর্ঘটনায় আবারও সামনে এলো নদীতে রাতে বাল্কহেড চলাচলের প্রশ্নটি। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা লঙ্ঘন করে অন্ধকারে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও কেন কর্তৃপক্ষের ভ্রুক্ষেপ নেই, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রিয়জন হারানো পরিবারসহ সংশ্লিষ্টদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্ঘটনা এড়াতে সন্ধ্যার পর বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ শীতলক্ষ্যায়। কারণ অন্ধকারে আলো নিভিয়ে বাল্কহেড চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বালু বহনের এসব বাহনের রাতে চলাচল থামাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জরিমানাও করা হয়। তারপরও থামছে না বাল্কহেড। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ‘নির্লিপ্ততা’কে দোষারোপ করছেন অনেকে।

নৌপরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, পেশাদার সুকানি (নৌযানের কর্ণধার) ও বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিকদের নিতে হলে পর্যাপ্ত বেতন দিতে হয়। কিন্তু বাল্কহেডের মালিকরা আনাড়ি লোকদের দিয়ে যানগুলো পরিচালনা করেন। এরপর আবার চলাচল করে রাতের বেলা নিষেধাজ্ঞা ভেঙে। সেজন্য প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, এসব বাল্কহেড বা তার সুকানির বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয় নৌ পুলিশ। এমনকি রাতের বেলা কোনো বাল্কহেড ধরা পড়লেও ছাড় পেয়ে যায় উৎকোচের গুণে।

শীতলক্ষ্যায় চলাচল করা মাঝিরা বাংলানিউজকে জানান, সন্ধ্যার পর এসব বাল্কহেডসহ ইঞ্জিনচালিত কিছু লঞ্চ চলাচল করে, যেগুলোর কোনো আলো নেই। এদের কারণে দু’দিন পর পরই নদীতে যাত্রীবাহী নৌকাডুবিসহ নানা দুর্ঘটনা ঘটে।  

শুক্রবার রাতে রূপগঞ্জের রুপসী কাজীপাড়া এলাকার শীতলক্ষ্যায় দুর্ঘটনার কবলে পড়া নৌকাটির মাঝি কালিমুল্লাহ জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা যখন গন্তব্যে যাচ্ছিলেন, তখন বাল্কহেডটির কোনো বাতি ছিলো না। হঠাৎ করে সেটি অন্ধকারের মধ্যে ধাক্কা মারলে নৌকাটি ডুবে যায়। পরে দ্রুত বাল্কহেডটি পালিয়ে যায়।  

শীতলক্ষ্যা নদীর একাংশে নৌযান চলাচল দেখভাল করে ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত নৌপুলিশ ফাঁড়ি। এসব বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জ নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) এস এম এহসান উল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের লোকবল কম আর আমরা ডেমরা থেকে সুলতানা কামাল ব্রিজ পর্যন্ত দেখি, কিন্তু দুর্ঘটনাটি আমাদের আওতার উত্তরে অনেক দূরের। আমাদের ডেমরার ফাঁড়িতে সব মিলিয়ে লোকবল এখন ১০ জন। আইনও এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  

তিনি বলেন, এই বাল্কহেডগুলো যেন রাতে না চলে সেজন্য অনেক মোবাইল কোর্ট ও জরিমানা করি। এসবের পরও এদের চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। আমাদের পর্যাপ্ত নৌযানও নেই, যে যান আছে তা নিয়ে এসব বাল্কহেডের সামনে আটকে দাঁড়ানো ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা দরকার।  

এএসপি এস এম এহসান উল্লাহ বলেন, একটি নৌকায় ১৪-১৫ জন মিলে ঘুরছিল, আমরা মাঝির সঙ্গেও কথা বলেছি। এতোগুলো মানুষ দেখলো না, একটি বাল্কহেড আসছিল। ব্যাপারটি আমরা আরও গভীরভাবে দেখছি।

তবে কোনো ধরনের উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ নাকচ করে দেন এএসপি।

শুক্রবার ডেমরা থেকে ১৪ তরুণ ওই নৌকা ভাড়া নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঘুরতে আসেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ সেটিতে বাল্কহেড ধাক্কা দিলে নৌকাটি ডুবে যায়। এসময় নৌকার মাঝিসহ ১৫ জনের মধ্যে ১০ জন সাঁতার কেটে তীরে উঠে আসেন। নিখোঁজ হন পাঁচজন।

শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে রূপগঞ্জের তারাব বাজার এলাকার সুলতানা কামাল সেতু পয়েন্ট থেকে ঢাকার কদমতলী থানার দক্ষিণ দনিয়ার এলাকার নাসির উদ্দিনের ছেলে জুতা ব্যবসায়ী তুষারের (২৬) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর রোববার সকাল ৭টার দিকে প্রথমে দক্ষিণ দনিয়ার আজিজুল মিয়ার ছেলে মাসুদুর রহমান লতিফ (১৮), জয়নাল মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম রিপন ওরফে বাবু (২০) ও রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার বরপা এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে জাসিম মোহাম্মদ রাজুর (২৮) মরদেহ পাওয়া যায়।  সাড়ে ৯টার দিকে পাওয়া যায় পূর্ব ধোলাইরপার এলাকার রবিউল মিয়ার ছেলে শরীফের (২৮) মরদেহ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
এইচএ/

** শীতলক্ষ্যা থেকে আরো ৪ মরদেহ উদ্ধার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।