ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পরবর্তী প্রজন্মকে কী দিয়ে যেতে পারবো জানি না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
পরবর্তী প্রজন্মকে কী দিয়ে যেতে পারবো জানি না

রাঙামাটি: অনেক কিছু দেখা হয়েছে। যে দেশের স্বপ্ন দেখে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, বর্তমানে সে স্বপ্নের দেশ খুঁজে পাচ্ছি না। পরবর্তী প্রজন্মকে কী দিয়ে যেতে পারবো তা জানি না।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযোদ্ধা পেয়ারা।

পুরো নাম শামসুদ্দীন মোহাম্মদ পেয়ারা।

বাবার চাকরি সূত্রে রাঙামাটিতে জন্ম। লেখাপড়া করেছেন জেলার সবচেয়ে পুরোনো স্কুল রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর জেলার বাইরে উচ্চ মাধ্যমিক পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। বর্তমানে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন তিনি। চাকরিসূত্রে রাজধানীতে বসবাস করছেন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, সেদিন ঘন কুয়াশা ছিলো না, ছিলো না শীতের প্রকোপ। এখনো মনে হয় এসএলআর নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি শত্রুকে ধ্বংস করবো বলে। কিন্তু সময় বসে নেই, পার হয়ে গেছে ৪৭টি বছর।

তিনি বলেন, বিএলএফ’র হয়ে কয়েকশো’ যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য ভারতের প্রদেশ মিজোরামের দেমাগ্রীতে গেছি ট্রেনিং করার জন্য। ট্রেনিংয়ে গিয়ে পরিচয় হয় রাঙামাটির আরেক কৃতি সন্তান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের ছাত্র মনীষ দেওয়ানের সঙ্গে। তৎকালীন বিএলএফ’র নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি। এ সংগঠনের কমান্ডার ছিলেন ভারতীয় জেনারেল সুজান সিং উবান। তার নেতৃত্বে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছিলো। কয়েক মাস প্রশিক্ষণ শেষে ভারত হয়ে রাঙামাটি আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

কমান্ডার সুজান সিং উবানের নির্দেশে ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর মেজর সুরীসহ হেলিকপ্টারে করে ভারতের দেমাগ্রী হয়ে রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল সাড়ে ৯টায়। রাঙামাটিতে পৌঁছার পর আমাদের হেলিকপ্টারে পাকিস্তানী বাহিনী গুলিবর্ষণ করলে হেলিকপ্টারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও হেলিকপ্টার আমাদের কুতুকছড়িতে নামিয়ে দিয়ে আরও সৈন্য আনতে চলে যায়। ততক্ষণে পাকিস্তানী বাহিনী কুতুকছড়িতে প্রবেশ করেছে। সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে আমাদের লড়াই হলো। সন্ধ্যার পর যুদ্ধ থেমে গেল। পরে ১৬ ডিসেম্বর সকালে কুয়াশার জন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না। মেজর সুরী ও আমরা যখন পরিস্থিতি দেখার জন্য বের হলাম তখন আবার পাকিস্তানী বাহিনীর গুলিবর্ষণ শুরু হলো। দিন পেরিয়ে বিকেলে আমি আর বন্ধু কর্নেল মণীষ দেওয়ান কাউখালীর উদ্দেশে পুরোমন পাহাড় পারি দিয়েছি। পাহাড়ে চাকমাদের ঘরে রাত কাটিয়েছি। ১৭ ডিসেম্বর সকালে কাউখালীতে পৌঁছালে সাধারণ মানুষেরা বলাবলি করছে রাজাকার, পাকিস্তানী বাহিনীরা পালিয়ে গেছে।

এদিকে ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশ হানাদার মুক্ত হলেও রাঙামাটি হানাদার মুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর। সেদিন আমরাই প্রথম রাঙামাটির পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় (বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এলাকা) দেশের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করি।

এতো কষ্ট করে দেশ স্বাধীন করার পর যখন দেখতে পাই ইতিহাস বিকৃত হচ্ছে বার বার। দেশদ্রোহীরা দেশের ক্ষতি করতে এখনো সক্রিয়। তখন ভাবি আমরা এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।