ঢাকা: ঢাকা শহরের যানজট কমাতে এবং উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে যাতায়াত দ্রুত করতে প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রুট চূড়ান্ত করতে প্রস্তাবিত রুটগুলোকে আরো পর্যালোচনা করার সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। বৃহস্পতিবার সেতু বিভাগে ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র রুট চূড়ান্তকরণ সম্পর্কিত বৈঠক শেষে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা (বিশেষজ্ঞ কমিটি) বলেছি একটি রুট চূড়ান্ত করার আগে প্রত্যেকটি রুট নিয়ে আরো পর্যালোচনা করতে। ’
সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবদুল অদুদ বলেন, ‘পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইকম অস্ট্রেলিয়া লিমিটেডের দুই মাস আগে ৪টি রুটের প্রস্তাব দেয়। সেখান থেকে বাছাই করে একটি রুট সুপারিশ করার জন্য বলা হয়েছে। ’
সেতু ভবনে ৪ ঘণ্টা দীর্ঘ বৈঠক শেষে আবদুল অদুদ বলেন, ‘মোট ৫টি রুট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ ও প্রশ্নের জবাব সম্বলিত প্রতিবেদন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেওয়ার পর রুট চূড়ান্ত করা হবে। ’
নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এ রুটের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করবেন বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী আবদুল অদুদ।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অধ্যাপক শামসুল হক, ড. এম রহমতুল্লাহ, ড. মুসলিম চৌধুরী, ড. এম জেড নিজাম।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকে বিশেষজ্ঞ কমিটি ছাড়াও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ, সেতু বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞ কমিটির বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইকমের কনসালটেন্ট কান্ট হুইলার।
রাজধানীর টঙ্গি থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চারটি রুটের প্রস্তাব জমা দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। রুটগুলোর একটি মহাখালী-ফার্মগেট হয়ে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত, দ্বিতীয়টি, কুড়িল বিশ্বরোড-রামপুরা হয়ে যাত্রাবাড়ি, তৃতীয়টি এয়ারপোর্ট থেকে দক্ষিণখান হয়ে খিলগাঁওয়ের পেছন দিয়ে সবুজবাগের ওপর দিয়ে ডেমরা এবং চতুর্থটি উত্তরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে রামপুরা-খিলগাঁও-কমলাপুর আইসিডির ওপর দিয়ে ডেমরা-শ্যামপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। সর্বশেষ ৫ নাম্বার রুটটি এগুলোর সমন্বয়ে তৈরি করা।
সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক আবদুল অদুদ বলেন, ‘আমরা এমন একটি রুট চূড়ান্ত করতে চাই, যা দিয়ে রাজধানীবাসী এখনই সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে পারে। ভবিষ্যতে ২০/৩০ বছর পর সুবিধা পাওয়া যাবে- এমন রুটে এখনই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের যৌক্তিকতা কম। ’
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি যেহেতু পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় নির্মিত হবে সেজন্য বিনিয়োগকারীদের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। ’
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার থেকে ২ বিলিয়ন ইউএস ডলার (প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা)। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এটি থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে তাদের বিনিয়োগ তুলে নেবে।
আবদুল অদুদ বলেন, ‘কাজটি করার জন্য ৯টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করে। তাদের মধ্য থেকে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে যোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়। ’
এ প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ইতালি ও থাইল্যান্ডের যৌথ বিনিয়োগে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, ফ্রান্স ও ভারতের যৌথ বিনিয়োগে জ্যামন-বোগিয়েস জেভি, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ বিনিয়োগে সিকদার-কেসিসি জেভি এবং চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
প্রকল্প পরিচালক আবদুল অদুদ জানান, এদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই চুক্তি করতে চায় সেতু বিভাগ।
গত বছরের ২০ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিনিয়োগকারীর প্রাক-যোগ্যতা যাচাইয়ের শর্তাবলী অনুমোদন করে। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগে আগ্রহীদের জন্য আগ্রহ প্রস্তাব আহ্বান করে। চলতি বছরের ৪ মার্চ ৯ টি আগ্রহ প্রস্তাব জমা পড়ে। এদের মধ্য থেকেই প্রাথমিক যোগ্যদের বাছাই করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ১২ আগস্ট ২০১০