ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ে সমন্বয়হীনতা

উবায়দুল্লাহ বাদল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১০
রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ে সমন্বয়হীনতা

ঢাকা: রমজানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা। বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রমজানের ছুটি শুরু ১৪ আগস্ট।

শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ নিজে সাংবাদিকদের কাছে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

কিন্তু দুপুরের দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান জানান, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি শুরু হবে ১৬ আগস্ট। রমজান, শবে কদর, জুমাতুল বিদা ও ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে ১৬ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের সব সরকারি, রেজিস্টার্ড বেসরকারি ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি থাকবে। এতে ৭দিন বেশি ছুটি দেওয়া হচ্ছে। এই ৭ দিনের ৩দিন প্রধান শিক্ষকের হাতে থাকা সংরক্ষিত ছুটি দিয়ে এবং অন্যান্য দিনের সঙ্গে বাকি ৪ দিনের পঠনসূচি সমন্বয় করা হবে। এতে ছুটির বর্ষপুঞ্জিতে কোনো পরিবর্তন হবে না।

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের জানান, ১৪ আগস্ট শুরু হয়ে মাদ্রাসা ছাড়া বাকি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি থাকবে। মাদ্রাসাগুলোতে থাকবে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী কাস শুরু করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালী স্বাক্ষরিত প্রেুসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সরকারি, বেসরকারি সকল স্কুল, কলেজ, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও সমমানের ইংরেজি আধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাস নেওয়া ১৪ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। মাদ্রাসা সমূহের কাস ১৪ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

রমজানে রাজধানীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘রোজা ও ঈদ উপলক্ষে প্রতিবারই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছুদিন আগে ছুটি দেওয়া হয়। এবার ছুটি কয়েক দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। এতে ৪/৫ দিন কাসের ক্ষতি হতে পারে। পরে তা সমন্বয় করে নেওয়া হবে। ’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরীক্ষা চলছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। ’

হঠাৎ করে শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির ঘোষণায় তোলপাড় শুরু হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মাঝে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘ছুটির প্রস্তাব তৈরি করার আগেই আজ হঠাৎই শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সরাসরি ছুটির নোটিশ এসেছে। ’ নোটিশদাতা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জবাব আসে,‘ উপরের নির্দেশে এটা করা হয়েছে। ’

নির্ভরযোগ্য অপর একটি সূত্র বলেছে, বৃহস্পতিবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পৃথক দুটি চিঠি আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে রাজধানীর যানজট নিরসনে  ১০ রমযানের পর রাজধানীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করা হয়। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে আগামী ১৪ আগস্ট দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৩,১৪ ও ১৫ আগস্ট সরকারি ছুটি থাকায় তড়িঘড়ি করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

কারো সঙ্গে কোনো বৈঠক না করে শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া এ ঘোষণা শুনে হতভম্ভ হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এরপর সাংবাদিকরা ছোটেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু আলম শহীদ খানের কাছে। সাংবাদিকদের কাছে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা শুনে তিনিও অবাক হন। তার প্রশ্ন, যানজটের যুক্তিতে রাজধানীর সঙ্গে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একই সিদ্ধান্ত কেন? কারো সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই কেন এ সিদ্ধান্ত ?

এরপর তিনি সাংবাদিকদের দুপুর ২ টায় আসতে বলেন। তখন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেবেন। এরপর দুপুরে তার দপ্তরে গেলে তিনি শুধু  মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তটাই আবার জানিয়ে দেন। সাংবাদিকদের করা সমন্বয়হীনতা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করে সচিব বলেন ‘যা তোমরা নিজেরাই বুঝতে পারো তা নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করো না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১০
শব্দসংখ্যা:৪৯৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।