ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিটিসিএল: অপশন ফর্মে সই করছেন না সাড়ে ১৩ হাজার কর্মী

ইশতিয়াক হুসাইন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১০
বিটিসিএল: অপশন ফর্মে সই করছেন না সাড়ে ১৩ হাজার কর্মী

ঢাকা : পূর্ণাঙ্গ কোম্পানি হিসেবে যাত্রার দেড় মাসেও সরকারের দেওয়া ‘অপশন ফর্ম’-এ স্বাক্ষর করছেন না বিটিসিএল’র সাড়ে ১৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। এরা সবাই বিলুপ্ত বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন বোর্ডের (বিটিটিবি) সাবেক কর্মী।



বিটিসিএল সূত্র বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানায়, কোম্পানির নীতিমালা তৈরি করে কর্তৃপ এর সুবিধা-অসুবিধা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না করা পর্যন্ত তাদের কেউ এই কাগজে সই করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।                                                          

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে একাধিকবার সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পছন্দসই কর্মক্ষেত্র বেছে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার। সে লক্ষ্যে একাধিকবার সরবরাহ করা হয়েছে ‘অপশন ফরম’, কিন্তু উল্লেখিত সাড়ে ১৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর কেউই এতে সই করেননি।     

বাংলাদেশ টিঅ্যান্ডটি শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেল ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল আজাদ বলেন, ‘কোম্পানির বিরুদ্ধে আমাদের কোনও আন্দোলন নেই। আমরা শুধু কোম্পানির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দেখতে চাই এবং ওই নীতিমালার আওতায় আমরা কি কি সুযোগ-সুবিধা পাবো তা স্পষ্ট করতে হবে। তবেই আমরা কোম্পানিতে থাকবো কি থাকবো না সে সিদ্ধান্ত নেবো। ’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমি ৩৪ বছর বিটিটিবিতে চাকরি করেছি। আমার চাকরি আছে আর ৪ বছর। বাকি এই কয়টি বছর বিটিসিএলে কিভাবে চাকরি করবো, কি সুবিধা পাবো কিংবা অতীত চাকরি বাবদ কি কি সুবিধাদি দেওয়া হবে- এসব বিষয় লিখিতভাবে নিশ্চত না করা হলে তো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। ’
 
অপরদিকে বিসিএস ক্যাডারের ৪৫০ জনেরও বেশি কর্মকর্তা সরকারি চাকরিতে থাকতে চেয়ে অপশন পেপারে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু তাদের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়নি বলে সূত্র জানায়। সরকার বিষয়টিও ফয়সালা করবে বলে বারবার সময় বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।  

উল্লেখ্য, বিটিটিবির জনবল ও সম্পদসহ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মূলধন নিয়ে ২০০৮ সালে কার্যক্রম শুরু করে বিটিসিএল। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৬৩৬ জনকে বিটিসিএল-এ নিতে সৃষ্টি করে সমপরিমান পদ। এসব সুপারনিউমেরারি (অতিরিক্ত) ও  খন্ডকালীন পদের মেয়াদ ছিল ২০১০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এর পরে আরো প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও তাদের চাকরির ভবিষ্যৎ নির্ধারিত না হওয়ায় তারাও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন বলে জানান।

তারা জানান, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব সুনীল কান্তি বারবার বলে এসেছেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউই চাকরি হারাবেন না। সবাইকেই বিটিসিএলে রাখা হবে। ’

‘কিন্তু এ কথা বাস্তবায়নের কোনও লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না’ বলে হতাশা প্রকাশ করেন তারা।  

এদিকে ১ জুলাই থেকে সম্পূর্ণ কোম্পানি আইনে বিটিসিএল তার পূর্ণাঙ্গ যাত্রা শুরু করেছে। নতুন জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুযায়ী ৮ হাজার ৭শ’ ৩ টি পদে পুরোনোদেরই নতুন করে নিয়োগ হবে। প্রত্যেকেই নতুন স্কেলে বেতন পাবেন।

এ ব্যাপারে বিসিএস টেলিকম সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমএ তালেব বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে জানান, গত দুই বছর ধরে বিষয়টি ঝুলে আছে। সরকারি নির্দেশ ছিল ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিতে থাকতে হবে। পরে এটি বাড়িয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়টুকু ব্রেক অব সার্ভিস হবে নাকি বিষয়টি অন্য কোনোভাবে সমাধান করা হবে তা এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি।  

তিনি বলেন, ‘সরকারি নির্দেশ বলে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তুু এটি কতটুকু আইনসিদ্ধ জানি না। ’

‘বিষয়টি ঝুলে থাকায় সার্ভিসের মান খারাপ হচ্ছে’ উল্লেখ করে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছি এখানে কাজ করতে আগ্রহী নই। ’

তবে ডেপুটেশন বা লিয়েনে দিলে তারা বিটিসিএলেই থেকে যাবেন বলে জানান।  

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিটিসিএল এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফসার উল আলম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘অনিশ্চয়তার কিছু নেই। নিয়মানুযায়ী সবকিছু করা হবে। তবে এজন্য একটু সময় লাগবে। ’

বাংলাদেশ সময় ১২১৪ ঘণ্টা, আগষ্ট ১২, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।