ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনী: হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু

জাকিয়া আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১০
৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনী: হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু

ঢাকা: ফৌজদাররি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের জন্য হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের দায়ের করা আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে বুধবার এ শুনানি হয়।



বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এসকে সিনহা।

সিআরপিসির ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ১৬৭ ধারা অনুযায়ী কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া যায়।

২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাইকোর্ট সিআরপিসির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের জন্য যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করেছিলেন। রায়ে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধন করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি উক্ত ধারা সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারকে বলা হয়।

পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে বিগত চার দলীয় জোট সরকার। লিভ টু আপিলে হাইকোর্টের রায় স্থগিতের আবেদন জানানো হয়। ২০০৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট সরকারের লিভ মঞ্জুর করলেও হাইকোর্টের নির্দেশনাসূমহ স্থগিত করেননি। এরপর সরকারের করা আপিল ২০০৭ ও ২০০৮ সালে দুই বার শুনানির জন্য কার্য তালিকায় আসলেও তখন দেশে জরুরি অবস্থা থাকায় শুনানি হয়নি। অবশেষে প্রায় ছয় বছর পর আজ ওই আপিলের শুনানি শুরু হলো।

আগামী মঙ্গলবার আবার শুনানি হবে। আজকের শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের লিভ টু আপিল মঞ্জুরের আদেশ উপস্থাপন করেন। এসময় মূল রিট আবেদনকারী মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষে ইদ্রিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

হাইকোর্টের নির্দেশনা:
হাইকোর্টের রায়ে ৫৪ ধারার ২ উপধারা সংশোধনের জন্য সরকারকে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়।

উল্লেখযোগ্য নির্দেশনার মধ্যে ছিলো : ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। খ. কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ. গ্রেপ্তারের তিন ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতকে এর কারণ জানাতে হবে। ঘ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার করলে ওই ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘন্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে। ঙ. গ্রেপ্তারকৃতকে তার পছন্দসই আইনজীবি ও নিকটাত্মীয়র সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। চ. গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের অভ্যন্তরে কাঁচ নির্মিত বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবি ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন। জ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ঝ. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিষ্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিষ্ট্রেট ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। ঞ. পুলিশ হেফাজতে বা কারাগারে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ ম্যাজিষ্ট্রেটকে জানাতে হবে। ট. পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিষ্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। মৃত ব্যক্তির ময়না তদন্ত করা হবে। ময়না তদন্তে বা তদন্তে যদি মনে হয় ওই ব্যক্তি কারা বা পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট মৃত ব্যক্তির আত্মীয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তা তদন্তের নির্দেশ দিবেন।

যেভাবে রিটের উৎপত্তি:
১৯৯৮ সালে ডিবি পুলিশ ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে সিআরপিসির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশ হেফাজতে রুবেল মারা যায়। এ ঘটনায় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার রুবেল হত্যা তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের জন্য কিছু সুপারিশ দেয়। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট্রসহ (ব্লাষ্ট) আরও কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

আবেদনে সিআরপিসির ৫৪ ধারা মতে সন্দেহবশত কাউকে গ্রেপ্তার এবং উক্ত আইনের ১৬৭ ধারা মতে তদন্তের নামে আসামীকে রিমান্ডে এনে আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে শারীরিক অত্যাচার ও ধর্ষনের মাধ্যমে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু ঘটানোর সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ করে হাইকোর্ট ১৯৯৮ সালের ২৯শে নভেম্বর সরকারের প্রতি রুল জারি করে।

এতে বলা হয়, সন্দেহবশত কাউকে গ্রেপ্তার এবং তদন্তের নামে রিমান্ডে এনে আসামীকে শারীরিক নির্যাতন করা থেকে নিবৃত্ত করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না সে ব্যাপারে সরকারকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি গ্রহণ করে ২০০৩ সালের ৭ই এপ্রিল হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় দেয়।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।