ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

দোহারের রতন স্বাধীনতা ভাস্কর্য

হায়াত মাহমুদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১০
দোহারের রতন স্বাধীনতা ভাস্কর্য

ঢাকা: শ্বেত পাথরের ওপর শির উঁচু করে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে এক যোদ্ধা। পেছনে পতাকা হাতে এক মুক্তিকামী শিশু।

বেদী ও মুর্তির মাঝখানে টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি।

মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকার দোহারের জয়পাড়ায় (দোহার জিরো পয়েন্টে) নির্মিত হয়েছে এ ভাস্কর্য। নাম ‘রতন স্বাধীনতা ভাস্কর্য’। মাটি থেকে ২৮ ফুট উঁচু এ ভাস্কর্যটি ঢাকার উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্বাধীনতা স্মারক। নকশা করেছেন মিঠু ও স্বাধীন নামের দুই চিত্রশিল্পী।

ঢাকার প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে একটি করে স্বাধীনতা স্মারক নির্মাণে সরকারের সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবেই এ ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছে, এমনটাই জানালেন দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ দত্ত।

ঢাকা জেলা পরিষদের অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় এবং দোহার উপজেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে এটি নির্মিত হয়েছে। মোট বাজেট ২৫ লাখ টাকা। নির্মাণ সময় লেগেছে মাত্র ১ মাস ১০ দিন।

দোহারের বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন খানের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। রতন দোহারের এক প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের নাম।
ছিলেন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীন দেশেই তাকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৯৭৩ সালে দোহারে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় তাকে।

ঢাকা-১ আসন দোহার ও নবাবগঞ্জ এলাকার সংসদ সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খানের ছোট ভাই রতন।

বিজয় দিবসে শত শত লোকের উপস্থিতে ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। আরও উপস্থিত ছিলেন দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ দত্ত, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, দোহার উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আলী আহসান খোকন, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান আনারকলি পুতুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি নির্মল গুহ, দোহার উপজেলা সাবেক কমিশনার রকিবুল হাসান রকিবসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

এ সময় উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাসহ শত শত মানুষ রতন হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।

রতন হত্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সিলেট থেকে অতর্কিতে দোহার আসেন সুনির্মল সিংহ চৌধুরী। মালিকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে তিনি প্রথম এ এলাকায় আসেন। পরবর্তীতে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে একের পর এক ঘটাতে শুরু করেন নিরীহ মানুষ হত্যা। তার এ অপকর্মের বিরুদ্ধে যে কথা বলত তাকেই প্রাণ দিতে হত।

সুনির্মল বাহিনী শুধু রতনকে হত্যা করেনি বরং দোহার এলাকার অনেক বৃদ্ধ ও যুবককে হত্যা করেছে। এমনই ৮০ বছর বয়স্ক আব্বাস মোল্লা নামে এক বৃদ্ধকে ধরে নিয়ে জীবিত বস্তায় ভরে পদ্মা নদীতে ফেলে হত্যা করেছে। এর ফলে গোটা এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। এরকম অসংখ্য হত্যাযজ্ঞ তারা ঘটায়।

এলাকার মানুষ অতিষ্ট হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে গণপিটুনিতে সুনির্মল সিংহ আহত হন এবং পুলিশ থানায় নিতেই তার মৃত্য হয়েছিলো। এরপর সুনির্মল বাহিনীর কিছু সদস্য এ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে রতন হত্যাকারীদের সকলে পালিয়ে যায়নি। কুখ্যাত সন্ত্রাসী সুনির্মল সিংহের অনুসারীরা এখনও এ এলাকায় বুক উঁচিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

রতন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার এখন দোহারবাসীর প্রাণের দাবি। সে দাবি তুললেন তার ভাই গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান নিজেও।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।