ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রাজধানীতে গাড়ি ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়: হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ

রিয়াজ রায়হান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১০
রাজধানীতে গাড়ি ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়: হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ

ঢাকা: রাজধানী ঢাকাতে সক্রিয় রয়েছে সংঘবদ্ধ গাড়ি ছিনতাইকারী প্রায় ৫০টি চক্র। এ চক্রের সদস্যরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়ি ছিনতাই করে তাদের নির্ধারিত দালালের মাধ্যমে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়।



প্রতিটি চক্রে রয়েছে ৫/৬ জন করে সদস্য। পুলিশের হাতে প্রায় সবগুলো চক্রের দলনেতাসহ অধিকাংশ সদস্য একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিনের মধ্যে তারা জামিনে বের হয়ে আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
আর এ কারণে কোনভাবেই গাড়ি ছিনতাই রোধ করা যাচ্ছেনা বলে মনে করছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও ছিনতাইকারী দলের কয়েক সদস্যর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ ও উদ্ধার দলের প্রধান সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার  মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজধানীতে গাড়ি ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত আছে প্রায় ৫০টি চক্র। এ চক্রকে ধরতে পুলিশের নানামুখি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কয়েকদিন পরপরই আমরা এদের আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠাই। কিন্তু কিছুদিন পরই তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আগের কাজ শুরু করে। ’

পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত রাজধানীর ধানমন্ডি, গুলশান, মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলা নগর এলাকা থেকে বেশি গাড়ি ছিনতাই হয়। এসব এলাকার শপিংমল এবং পার্কের সামনে গাড়ি রেখে মালিক একটু দূরে গেলেই তারা কৌশলে গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

অন্যদিকে যাত্রী বেশেও কিছু গাড়ি ছিনতাই করা হয়। এসব গাড়ির চালকেরা সংশ্লিষ্ট মালিকের অনুপস্থিতিতে রাজধানীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাত্রী পরিবহন করে থাকে। বিশেষ করে ফার্মগেট থেকে গুলশান ১, বিজয় স্মরণি থেকে শ্যাওড়াপাড়া, বিমান বন্দর সড়কে এসব গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে।

ঢাকা মহানগরীতে সবচেয়ে বেশি গাড়ি ছিনতাই করে থাকে মোহাম্মদপুরের হাবিল ও বাশার, ধানমন্ডির বেলায়েত ও রনি এবং গুলশান এলাকার সাদেক আকতার ও বিল্লাল, নাখালপাড়ার এম এ হাসান ওরপে রাজ চক্র।

এর মধ্যে সম্প্রতি রাজসহ তার কয়েক সহযোগীকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে তাদের কাছ থেকে ৫টি প্রাইভেটকার উদ্ধার করেছে।
পুলিশের হতে আটক ছিনতাই চক্রের দলনেতা রাজ ও তার সহযোগী নাজিম বাংলানিউজকে জানায়, তারা কয়েকজনে প্রথমে একটি গাড়ি টার্গেট করে। তারপর এক গ্রুপ সেই গাড়ির চালকের গতিবিধির ওপর নজর রাখে। তাদের সংকেত পাওয়ামাত্র অন্য গ্রুপ গাড়িটি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।

ছিনতাই করা গাড়ি বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রত্যেক গ্রুপের দু/একজন করে দালাল থাকে।   এদের মাধ্যমে গাড়িটি বিক্রি করা হয়। বিক্রির টাকা থেকে ২০ ভাগ দালালকে দিতে হয় বলে তারা জানায়।

তারা আরও জানায়, এসব দালালরাই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ছিনতাইকারীদের আদালত থেকে জামিনের ব্যবস্থা করে থাকে।

অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে ছিনতাইকারীদের প্রায় প্রত্যেকেই প্রকৃত নাম গোপন করে। তারা পুলিশের খাতায় বিভিন্ন সময় নানা নামে তালিকাবদ্ধ হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে আরও জানান, গত একমাসে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক গাড়ি ও মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫’শ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু  এদের বেশিরভাগই জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করীম ছিনতাইকারীদের দ্রুত জামিন পাওয়ার বিষয়ে বাংলানিউজকে জানান, মামলায় আনীত অভিযোগ দুর্বল আকারে উপস্থাপিত হওয়া, তদন্ত দ্রুততার সঙ্গে  সম্পন্ন না হওয়া, আসামিদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ না এনে ঢালাও অভিযোগ আদালতের সামনে উপস্থাপন করায় আসামিরা জামিন পেয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময় ২০১০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭,২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।