জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) যেসব রাজনৈতিক দল এখনো জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেনি, তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই স্বাক্ষর করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি কীভাবে দেওয়া যায় সে বিষয়ে একটি সম্ভাব্য সুপারিশ দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপি এতদিন ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও এনসিপি এখন বারবার জুলাই সনদের কথাই বলছে। এতে সাধারণ মানুষের কাছে কী বার্তা যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এনসিপি সাধারণ জনগণের সঙ্গে নিজেদের মতো করে কথা বলেছে। তারা একটি রাজনৈতিক দল, তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকেই জনগণকে বার্তা দিচ্ছে। নিশ্চয়ই তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। এখানে সরকারের বলার কিছু নেই। এনসিপি বলছে, সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখাটাও যেন সর্বসম্মতিক্রমে দলিল আকারে আসে।
এনসিপির সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে যদি একটি দলের মতপার্থক্য থাকে, সেটা দূরত্ব নয়। এর আগেও বড় বড় দল তাদের মতামত দিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই একমত হয়নি। এখনো যারা স্বাক্ষর করেছে, তারাও নোট দিয়েছে। এগুলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ, মতানৈক্য থাকতেই পারে।
কোনো সরকারি আদেশ জারি করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনকে বলা হয়েছে তারা কয়েকটি বিকল্প সুপারিশ দেবে। তারা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করেছে। এখন কমিশন কিছু প্রস্তাব দেবে, তারপরই বলা যাবে কী করা হবে।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চাওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একটি সুসংহত আইনি রূপরেখা তৈরির বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন যখন সরকারের কাছে রিপোর্ট দেবে, তখন সরকার একটি অবস্থান নেবে। এটি সরাসরি আইন হবে না, তবে এর একটি কার্যকর ভিত্তি তৈরি করার মতো রূপরেখা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এটা নিয়ে আলোচনা হতে হবে, এখন আমি একা কিছু বলতে পারব না। ঐকমত্য কমিশনের মধ্যেই এই ঐক্য তৈরি করতে হবে। সেই জন্যই কমিশনকে রিপোর্ট দেওয়ার সময় ও আলোচনার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। সরকারের এখানে কোনো পক্ষপাত নেই; সরকার কেবল এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সহায়তা করছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, দেশ ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদরাই চালাবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই দেশ পরিচালনা করবে। তাই শাসনব্যবস্থার প্রস্তাবনাগুলোকে একমতে আনতে সরকার কেবল একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সরকার কোনো বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলেনি, বলার কথাও নয়।
সাংবাদিকরা জানতে চান, এনসিপির প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে কি তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে? জবাবে উপদেষ্টা বলেন, তারা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করবে। কমিশন ও তাদের মধ্যে আলোচনার পর প্রস্তাবনা নিয়ে সমঝোতা হলে তারা স্বাক্ষর করবে। যেকোনো বিষয়ে সব পক্ষকে একমত হতে হয়। আমরা আশাবাদী ভালো কিছুই হবে।
এনসিপির দাবির যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যৌক্তিকতা নিয়ে আমি কিছু বলব না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি কোনো বিষয়ে একমত হয়, আমি সেটিকে সঠিক বা বেঠিক বলব কীভাবে? রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যদি সব দল একমত হয়, আমরা সেটিকেই সঠিক বলে ধরে নেব।
সরকারের পরামর্শে এনসিপি এখনো সনদে স্বাক্ষর করেনি, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। বাংলাদেশে একটা ‘ষড়যন্ত্র তথ্য’ তত্ত্ব চালু আছে। যেখানে সরকারপ্রধান বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন, সেখানে এমন অভিযোগের কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। কেবল সন্দেহ তৈরি করার জন্যই এসব কথা বলা হয়।
জিসিজি/এমজে