ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ভূমি প্রশাসন বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। দেশের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমি রাষ্ট্রীয় সম্পদ, আর সেই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ডরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘অক্টোবর ২০২৫-এর কমিশনার সমন্বয় সভা’য় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ।
ভূমি উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে এসি ল্যান্ডরা শুধু ভূমি প্রশাসনের কাজেই নয়, প্রশাসনের নানা দায়িত্বেও যুক্ত। ফলে তাদের ওপর দায়িত্বের চাপ অনেক। তবে দায়িত্ব যতই বহুমাত্রিক হোক না কেন, ভূমিসেবায় কোনো প্রকার গাফিলতি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ভূমি জনগণের জীবনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ভূমি সংক্রান্ত সমস্যায় সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন—এই হয়রানি দূরীকরণই সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।
তিনি আরও বলেন, একজন কর্মকর্তার কাজ বহুমাত্রিক হলেও তার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনকল্যাণ। ভূমিসেবা সেই জনকল্যাণেরই কেন্দ্রবিন্দু। তাই অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ভূমিসেবাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, এটি নৈতিক কর্তব্যও। ভূমিসেবার মান যত উন্নত হবে, সরকারের সাফল্য তত দৃশ্যমান হবে এবং জনগণের আস্থা আরও মজবুত হবে।
সভায় জানানো হয়, সারাদেশে একযোগে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে নামজারি সফটওয়্যার ‘ভার্সন ২.১’ চালু করা হবে। পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপও উদ্বোধন করা হবে। অনলাইনে ভূমিসেবা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা আরও সম্প্রসারিত হবে। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অনলাইনে ভূমিসেবা প্রদানে সফলতার জন্য আটজনকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হবে বলে জানান ভূমি উপদেষ্টা।
সভায় বিভাগীয় কমিশনারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, কোনো জেলা পরিদর্শনে গেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)দের পথিমধ্যে দাঁড়িয়ে শুভেচ্ছা জানানোর প্রথা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে রাষ্ট্রীয় কাজের ক্ষতি হয়। তিনি নির্দেশ দেন, এ ধরনের প্রথা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং বিভাগীয় কমিশনারদের এ বিষয়ে কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ভূমি অফিসগুলো আমরা যেমন দেখতে চাই এবং জনগণ যেমন দেখতে চায়—সেরকমই হতে হবে। ভূমিসেবাকে আধুনিক ও সহজ করতে সরকার ইতোমধ্যে একাধিক উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের মূল চালিকাশক্তি এসি ল্যান্ড এবং তাদের পদপ্রদর্শক কমিশনাররা। তাই তাদের দায়িত্ব শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি এক ধরনের জনসেবামূলক অঙ্গীকার।
সভায় জানানো হয়, ২০ জুন থেকে ১২ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩০টি ই-নামজারি আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে ৭২ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে ভূমি উন্নয়ন করের দাবি ছিল ১ হাজার ৪৪৪ কোটি ৪২ লাখ ২৬ হাজার ৩১৩ টাকা, যার মধ্যে ৩৩৯ কোটি ১১ লাখ ২৭ হাজার ২১৫ টাকা আদায় হয়েছে। এ সময় ২ কোটি ১৯ হাজার ৫২০টি হোল্ডিং আবেদনের বিপরীতে ৮৫ দশমিক ৬১ শতাংশ হোল্ডিং প্রস্তুত করা হয়েছে। সারাদেশের ৬১ জেলায় ৮১৫টি ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
সমন্বয় সভায় বিভাগীয় কমিশনার, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ জে এম সালাউদ্দিন নাগরী, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসকে/আরবি