রাজধানীর রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্ট এলাকায় একটি ক্লাব ও লাইব্রেরি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় দুটি গ্রুপের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের আবাসিক এলাকার ভেতরে ইউনাইটেড ব্রাদার্স নামের সংগঠনের ক্লাবে এ ঘটনা ঘটে। বাঁশ ও টিন দিয়ে তৈরি ওই ক্লাবের সামনেই সংগঠনটি একটি লাইব্রেরি পরিচালনা করত।
প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী, পুলিশ ও ক্লাব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবাসিক এলাকার বাইরে চায়ের দোকান বসানো নিয়ে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে ক্লাবের সামনে মীমাংসার জন্য বসে তারা। এ সময় বিএনপি সমর্থক পরিচয় দেওয়া একটি গ্রুপ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা পরিচয় দেওয়া অপর গ্রুপকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর রাত আড়াইটার দিকে মারধরের শিকার গ্রুপটি আবার সেখানে গিয়ে ‘আওয়ামী লীগের দোসররা বসে’ আখ্যা দিয়ে ক্লাব ও লাইব্রেরি ভাঙচুর করে।
রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের একাধিক বাসিন্দা জানান, আওয়ামী লীগের আমলেই এখানে ইউনাইটেড ব্রাদার্স ক্লাবটি গড়ে ওঠে। তখন এটি নিষিদ্ধ দলটির নেতারা পরিচালনা করতেন। পরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আবাসিক এলাকার সাধারণ মানুষ ক্লাবটি পরিচালনা শুরু করে। সম্প্রতি চায়ের দোকান বসানো এবং ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া একটি গ্রুপ ও বিএনপি সমর্থক পরিচয় দেওয়া অপর গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ নিয়ে অতীতেও তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে পুনরায় মীমাংসার জন্য বসলে একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী গ্রুপকে মারধর করে অপর গ্রুপটি। পরে রাত আড়াইটার দিকে তারা ফিরে এসে ক্লাব ও লাইব্রেরি ভাঙচুর করে।
এ ঘটনায় ক্লাবের সভাপতি আব্দুল্লাহ ফাহাদ আল ফয়সাল শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টায় গিয়ে ভাঙচুরের বিষয়টি দেখতে পান এবং তুরাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে তিনি জানান, অফিসকক্ষ ও লাইব্রেরি ভাঙচুরের পাশাপাশি ভেতরে থাকা দুটি ঘাস কাটার মেশিন, একটি প্রজেক্টর, ৪০টি চেয়ার, পাঁচটি টেবিল, চারটি সিসি ক্যামেরা, একটি হার্ডডিস্ক, একটি রাউটার, ৩০টি ফ্লাডলাইট, ক্রিকেট ব্যাট ও খেলার সামগ্রীসহ প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা।
ক্লাব কমিটির এক উচ্চপদস্থ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুই মাস আগে তারা সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছেন, তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এলাকাবাসীরা মিলে ক্লাবের সামনে একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলেন, যেখানে সবাই বই দান করেছিলেন। এখানে আহত শিক্ষার্থীসহ এলাকার কিশোর-তরুণরা খেলাধুলা ও বই পড়তে আসত। আওয়ামী লীগের ট্যাগ দিয়ে তাদের ক্লাব ও লাইব্রেরি ভাঙচুর এবং খেলার সামগ্রীসহ বিভিন্ন জিনিস লুট করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চায়ের দোকান বসানো নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি গ্রুপ ও বিএনপি সমর্থক আরেকটি গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা ছিল। অতীতে তাদের মধ্যে মারামারিও হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মীমাংসার জন্য বসলে বৈষম্যবিরোধী গ্রুপকে মেরে তাড়িয়ে দেয় অপর গ্রুপটি। পরে রাতে তারা ফিরে এসে আমাদের ক্লাব ও লাইব্রেরি ভাঙচুর করে।
তবে মারামারিতে জড়িত দুই গ্রুপের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তাদের পরিচয়ও স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট এলাকায় চায়ের দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়েছে। মীমাংসার জন্য বসলেও সমঝোতা না হওয়ায় তারা মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে।
গ্রুপগুলোর পরিচয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পরিচয় দেওয়া গ্রুপটি অন্য গ্রুপটিকে ছাত্রলীগ বলছে, আবার ওই গ্রুপটি নিজেদের ছাত্রদল দাবি করছে। তবে নির্দিষ্ট করে তাদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
লাইব্রেরির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, সেখানে কোনো লাইব্রেরি ছিল না, কেবল একটি বাঁশ ও টিনের তৈরি ঘর ছিল।
এসসি/এসআরএস