রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক, চত্বর, গাড়ির হর্ন আর মানুষের কোলাহলের ভিড়ে প্রতিদিনই হারিয়ে যায় অসংখ্য মুখ। এই শহুরে জীবনের ভেতরেই মানবিকতার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়াতল বাংলাদেশ।
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য শুধু ক্ষুধা মেটানো নয়, বরং প্রান্তিক মানুষের হৃদয়ে পৌঁছানো। প্রতিদিন শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত অনাথ-এতিম পথশিশু, ভাসমান মানুষ ও দিনমজুর পাচ্ছে একবেলার পুষ্টিকর খাবার, সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য হলেও ভালোবাসা, সম্মান এবং মানুষের মতো বেঁচে থাকার স্বাদ।
ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে এই কার্যক্রমে ভিড় জমে যায় শিশু ও অভুক্ত মানুষের। কেউ অপেক্ষা করছে খাবারের প্যাকেটের জন্য, কেউবা এক কোণে বসে তাকিয়ে আছে- যেন এই আয়োজনটি কেবল তার জন্যই সাজানো। ছোট্ট একটি খাবার প্যাকেটের ভেতরেই থাকে সম্মান, যত্ন আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছবি।
ছায়াতল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, খাবার শুধু পেটের ক্ষুধা মেটায় না, অনেক সময় এটি হয়ে ওঠে ভালোবাসার প্রকাশ ও সম্মানের অনুভব। এই শিশুরাও আমাদের মতোই মানুষ-তাদেরও প্রাপ্য সম্মানজনক জীবন, একটু ভালোবাসা ও যত্ন। সমাজের উন্নতি তখনই হয়, যখন আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষটির পাশে দাঁড়াতে পারি। একবেলা খাবার হয়তো সাময়িক সমাধান, কিন্তু এর ভেতরে থাকে ভালোবাসা, যা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। আমরা শুধু পেট ভরাতে আসিনি, আমরা এসেছি মনে সাহস দিতে।
এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, আমরা ভেবেছিলাম দিতে এসেছি, কিন্তু এখানে এসে বুঝেছি আসলে আমরাই অনেক কিছু পেয়েছি। এই শিশুদের হাসি, তাদের চোখের ভাষা- এগুলো জীবনের সেরা উপহার। প্রতিবারই শিখি, আমরা যত দিই তার চেয়ে অনেক বেশি পাই। তাদের কৃতজ্ঞতা আর মৃদু হাসিই আমাদের অনুপ্রেরণা।
দাতাদের সহযোগিতায় ছায়াতল বাংলাদেশ প্রতিদিনই পরিবেশন করছে পুষ্টিকর খাবার- কখনো ভাত, মুরগির মাংস ও ডাল; কখনো ভাত, ডিম ও সবজি; আবার কখনো খিচুড়ি, ডিম ও পানীয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, একজন মানুষ, একটি খাবার, একটি সময়- কিছুই ছোট নয়, যদি তা আসে হৃদয় থেকে।
ছায়াতল বাংলাদেশ শুধু খাবার বিতরণ করছে না, বরং সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মনে জাগিয়ে তুলছে বিশ্বাস- সমাজ এখনও আছে, এখনও এমন মানুষ আছে, যারা নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় এগিয়ে আসে।
ডিএইচবি/আরবি