ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ জুন ২০২৫, ২২ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

রাজস্থলীর ৩ ইউনিয়নে সহস্রাধিক মানুষের অন্ধকারে বসবাস

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:৪৫, জুন ১৯, ২০২৫
রাজস্থলীর ৩ ইউনিয়নে সহস্রাধিক মানুষের অন্ধকারে বসবাস

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ছোট উপজেলার নাম রাজস্থলী। ১৯০৯ সালে রাজস্থলী থানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে রাজস্থলী উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

 

এ উপজেলার উত্তর-দক্ষিণে বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলা, পূর্ব-পশ্চিমে রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলা অবস্থিত।  

রাঙামাটি থেকে বান্দরবান জেলায় যেতে হলে এ উপজেলা মারিয়ে যেতে হবে। এ উপজেলায় নির্মিত হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সড়ক। সীমান্ত সড়ক নির্মিত হওয়ায় পর্যটন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে উপজেলাটি ঘিরে।  

এ উপজেলায় বহু আগে পৌঁছেছে বিদ্যুৎ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক। উপজেলা শহরে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও দেশের অন্যতম পুরোনো এ উপজেলার প্রায় ৫০টি পাড়ার মানুষ এখনো বিদ্যুৎ এবং নেটওয়ার্ক সেবা থেকে বিছিন্ন। অর্থাৎ আলোর নিচে অন্ধকারের গল্প।  

সেইসব এলাকায় নির্মিত হয়নি সড়ক, উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ থেকে বিছিন্ন। কঠিন সংগ্রামী জীবন পার করছে ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আটটি পাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি পাড়া, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়টি পাড়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়টি পাড়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি পাড়া এবং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি পাড়া, ২ নম্বর ওয়ার্ডের দুইটি পাড়া, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি পাড়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুইটি পাড়া, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি পাড়াসহ তিনটি ইউনিয়নের ৫০টি পাড়ার মানুষ বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক সেবা থেকে বঞ্চিত।

এই তিন ইউনিয়নের পাড়াগুলোতে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় ওই এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে চরম হিমশিম খেতে হয়। বিভিন্ন সেবা বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন স্থানীয়রা।  

এছাড়াও পাড়াগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালিত টেকসই সামাজিক পাড়া কেন্দ্র, বৌদ্ধ মন্দির, এতিম ছাত্রাবাস রয়েছে। বিদ্যুৎ এবং নেটওয়ার্ক না থাকায় স্কুলগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রম।

রাজস্থলী উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী হাবিবুল্লাহ মিজবাহ বলেন, পুরো দেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে বদলে যাচ্ছে তাহলে আমরা কেন নই? আমরাও সমতলের মতো সমানতালে এগিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাই।  

ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা বলেন, আমাদের ইউনিয়নের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ এবং নেটওয়ার্ক সেবা নেই। বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্কের আওতায় এলেও আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজর দিলে আমরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবো।

রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের অনেকগুলো গ্রাম বিদ্যুৎ এবং নেটওয়ার্ক সেবা থেকে বঞ্চিত। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এখানকার দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থান। সড়ক পথ না থাকায় এখানকার অনেক এলাকার সঙ্গে উপজেলা শহরের যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে।  

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা গেলে এই এলাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে যোগ করেন তিনি।  

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ