ঢাকা: বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার (১৩ জুন) লন্ডনের ঐতিহাসিক ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক বহুল আলোচিত বৈঠক। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী মুখোমুখি বসবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাই ভোল্টেজ এ বৈঠক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক টার্নিং পয়েন্ট। সারাদেশ তাকিয়ে আছে আজকের এ বৈঠকের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বৈঠকই বলে দেবে-কবে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, কী হবে তার রোডম্যাপ, কোন পথেই বা হাঁটবে বাংলাদেশের রাজনীতি।
বৈঠকের সময় ও স্থান প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেই চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (১০ জুন) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শুক্রবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে বৈঠকটি হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে শুরুতে কঠোর থাকলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করতে পারে বিএনপি। দলটির কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপেই এ অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে।
এ বিষয়ে একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হলে তা নিঃসন্দেহে দেশের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করবে।
ভিডিও বার্তায় শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের সামনের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে৷ সামনে নির্বাচনের একটি সময় দেওয়া হয়েছে এপ্রিলে, এই মিটিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মিটিংয়ে আমরা আশা করছি যে তারা এখানে আসলে কি এজেন্ডা এটা না, তারা যে মিটিং করছেন এবং তারা সব কিছুই আলাপ করবেন। কেননা তারা একজন হচ্ছেন এখনকার ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের প্রধান, আরেকজন হচ্ছেন বাংলাদেশের লার্জেস্ট পলিটিক্যাল পার্টির (সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল) প্রধান। তাদের দুজনের মধ্যে আলোচনা হবে এবং তারা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করবেন।
শফিকুল আলম বলেন, এটার প্রস্তুতি হিসেবে আজ বিএনপির একজন প্রতিনিধি এসেছিলেন৷ আমাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে৷ আমরা আশা করছি, কালকে ৯টার মধ্যেই উনারা আসবেন। আসার পরে একটা ওয়ান টু ওয়ান মিটিং হবে। এই ক্ষেত্রে উনারা যদি মনে করেন অন্যান্য কেউ থাকবেন, সেটা এই দুজন লিডারই এটা ডিসাইড করবেন (সিদ্ধান্ত নেবেন)।
গত শুক্রবার (৬ জুন) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যে কোনো দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এ ঘোষণার পরপরই রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এপ্রিল মাসে নির্বাচন হলে পরীক্ষা, আবহাওয়াজনিত জটিলতা ও রমজান মাসের কারণে নির্বাচনী কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
পাশাপাশি, কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়, এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ছিল না।
বিশ্লেষকদের মতে, এ বৈঠক দেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। আলোচনা প্রসঙ্গে নির্বাচনের রোডম্যাপ, একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে মতবিনিময় হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
চারদিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে এক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের পক্ষ থেকে ‘কিংস তৃতীয় চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ দেওয়া হয় ড. ইউনূসকে।
এর আগে সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেন।
এখন দেখার পালা, কী কী সিদ্ধান্ত আসে হাই ভোল্টেজ এ বৈঠক থেকে।
এসআই