ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৬ জুন ২০২৫, ০৯ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

শেখ মুজিব ও ৪ নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর সঠিক নয়: উপদেষ্টা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১২, জুন ৪, ২০২৫
শেখ মুজিব ও ৪ নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর সঠিক নয়: উপদেষ্টা

ঢাকা: শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল এবং তাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করার খবর সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

বুধবার (৪ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে মঙ্গলবার রাতে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়েছে।

অধ্যাদেশ সূত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামানসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের (এমএনএ-এমপিএ) মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুসহ মুজিবনগর সরকারের অন্যদের মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা বাতিলের বিষয়ে যা বলা হচ্ছে, সেটি সঠিক নয়।

মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। যারা সশস্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, যারা পরিচালনা করেছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা। গণমাধ্যমে মিসলিডিং হয়েছে। তবে ওই সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন, যোগ করেন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ কূটনীতিকরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। সহযোগী মানে এটা নয় যে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে তা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও এটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

উপদেষ্টা আরও জানান, ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধার যে সংজ্ঞা ছিল, সেটাই তারা বাস্তবায়ন করেছেন। ২০১৮ ও ২০২২ সালে এটা পরিবর্তন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে। জাতিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধ না করলে আমরা স্বাধীন হতাম না। মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে গৌরব আমাদের জাতির ইতিহাসে আর হয়নি।

উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে। এটাকে ইতিহাসভিত্তিক করা হয়েছে। যারা সশস্ত্রভাবে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন এবং এ যুদ্ধ যারা পরিচালনা করেছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা হবেন। মুক্তিযুদ্ধকে সফল করার জন্য যারা দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে সহযোগিতা করেছেন, কাজ করেছেন, যারা সশস্ত্র ছিলেন না-তারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের যে কথাটি বলা হচ্ছে, সেটি সঠিক নয়। সঠিক নয় এ অর্থে যে এখানে (অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায়) সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার- যেটা মুজিবনগর সরকার এবং এ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হবেন। তার মানে, মুজিবনগর সরকার নিজে এবং তার দ্বারা স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনীর যারা সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হবেন। তাহলে মুজিবনগর সরকারের মধ্যে কে ছিলেন? শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, মনসুর আলী, কামরুজ্জামান ও খন্দকার মুস্তাক সাহেব ছিলেন। ওনারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, এ যুদ্ধটা এ সরকার (মুজিবনগর সরকার) পরিচালনা করেছে। এ সরকারের লেজিটিম্যাসির (বৈধতা) বাইরে কাউকে স্বীকৃতিই দেওয়া হয়নি। এ সরকারটাই ছিল তখন স্বীকৃত সরকার।

এ সরকার হয়তো মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করল, কিন্তু তারা তো সরাসরি রণাঙ্গনে অংশ নেয়নি- এ ধরনের এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, এটা হয়নি। কারণ রণাঙ্গন ওনারা পরিচালনা করেছেন। তাহলে তো একই কথা আপনি সেক্টর কমান্ডারদের ক্ষেত্রেও বলতে পারেন। তাহলে তারা কি যুদ্ধ করেননি? যুদ্ধ ডিজাইন করেছেন, যুদ্ধে কারা যাবে, না যাবে-পরিচালনা করেছেন। ঠিক একইভাবে তো মুজিবনগর সরকার পুরো যুদ্ধটা পরিচালনা করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রেশন কোথা থেকে আসবে, অস্ত্র কোথা থেকে আসবে—এগুলো ওই সরকার (মুজিবনগর সরকার) করেছে না? এটাই তো ঐতিহাসিক সত্য যে এ সরকার পুরো যুদ্ধটা পরিচালনা করেছে। কেমন করে এ ইতিহাস পরিবর্তন করা যায়? শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের সংবাদটি মিসলিডিং হয়েছে, এটি সত্য নয়।

মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ওটা মুজিবনগরের কর্মচারীদের বিষয়ে বলা। মুজিবনগর সরকারের অধীনে বেতনভুক্ত যে কর্মচারীরা ছিলেন, তাদের বলা হয়েছে সহযোগী, সরকারকে সহযোগী বলা হয়নি। পিএমএ (মেম্বার অব প্রোভিন্সিয়াল অ্যাসেম্বলি) ও এমএনএ-দের (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) মধ্যে যারা সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। সর্বাঙ্গীণভাবে এটাকে মর্যাদাবান করা হয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হয়েছেন, তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে-এটা মোটেও নয়। কারণ এ অবদানও অসাধারণ। সেভাবেই তাদের সম্মানিত করা হচ্ছে- কে কোন ভূমিকায় ওই সময় অংশ নিয়েছিলেন। মর্যাদায় পরিবর্তন এলেও ভাতাসহ রাষ্ট্রের দেওয়া সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য নেই, সবাই সমান।

অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা সুস্পষ্ট জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, অধ্যাদেশ করার আগে যাচাই হয়েছে, ভেটিং হয়েছে, অনেক কিছু হয়েছে। আপনি যদি টুইস্ট করতে চান, করতে পারেন। এটা তো অল টুগেদার ডিফরেন্ট জিনিস। আমরা ইতিহাসনিষ্ঠভাবে চেষ্টা করছি, মুক্তিযুদ্ধটা যাতে কেউ বিতর্কিত না করতে পারে।

এসকে/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।