ঢাকা, সোমবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জুন ২০২৫, ০৫ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

চীনের কাছে কৃষিখাতে ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তা কামনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:৩৮, মে ৩১, ২০২৫
চীনের কাছে কৃষিখাতে ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তা কামনা

ঢাকা: চীনের কাছে কৃষিখাতে ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তা চেয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদারে এই সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

একইসঙ্গে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।

শনিবার (৩১ মে) ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার প্রয়োগ, বীজ বপন, কীটনাশক ছিটানো এবং ফসলের অবস্থা পর্যবেক্ষণে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। চীনের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বাংলাদেশের কৃষিখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা থাকা সত্ত্বেও আধুনিক ফিশিং জাহাজ ও প্রযুক্তির অভাবে এই খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। চীনের সহায়তায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা ও প্রক্রিয়াকরণের সুযোগ বৃদ্ধি পেলে রপ্তানি আয় বাড়বে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।

ফিশিং জাহাজ ও প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য খাতের উন্নয়নে অত্যাধুনিক জাহাজ ও মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি প্রয়োজন। চীনের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি এই খাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন জনশক্তির ক্ষেত্রে ডেমোগ্রাফিক সুবিধা ভোগ করছে। এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে, যারা দ্রুত ও মানসম্পন্ন কাজ করতে পারে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা চীনকে আহ্বান জানান বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগ করতে। তিনি বলেন, আসুন, এ দেশে বিনিয়োগ করুন এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখুন।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও বাংলাদেশের সঙ্গে প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, চীন কৃষি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায়। তিনি বলেন, বিশেষ করে স্মার্ট কৃষি ও ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

তিনি আরও বলেন, চীন বাংলাদেশের মৎস্য ও সমুদ্রসম্পদ খাতে সহায়তা বাড়ানোর জন্য আগ্রহী। বাংলাদেশের মৎস্য খাত ও সমুদ্রসীমার সম্পদ আহরণে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত, যোগ করেন তিনি।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ক্রমশ বাড়ছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিশেষ করে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে চীন বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যার সুফল এ দেশের মানুষ পাচ্ছে।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষই আগামী দিনে বাংলাদেশ-চীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বৈঠকে চীনের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আউটওয়ার্ড ইনভেস্টমেন্ট ও ইকোনমিক কো-অপারেশনের মহাপরিচালক, ডিপার্টমেন্ট অব এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সের মহাপরিচালক। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, কৃষি সচিব এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান প্রমুখ।

বৈঠকে বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অবাধ বাণিজ্য প্রসারে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং ই-কমার্স খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং চীনের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

উল্লেখ্য, চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীর একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে শনিবার (৩১ মে) দুপুরে তিন দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান।

জিসিজি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।