ঢাকা, সোমবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩২, ০৫ মে ২০২৫, ০৭ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

শিল্পখাতে ব্যর্থতার কারণ অতীতের দুর্বৃত্তায়ন: শ্রম উপেদষ্টা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:১১, মে ৩, ২০২৫
শিল্পখাতে ব্যর্থতার কারণ অতীতের দুর্বৃত্তায়ন: শ্রম উপেদষ্টা

ঢাকা: অতীতের দুর্বৃত্তায়ন শিল্পখাতে ব্যর্থতার কারণ বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, কোনোদিন রাজনীতি না করেও কোটি টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দলের নমিনেশন কিনে এমপি-মন্ত্রী হয়।

কোনো দলের তিন বছর সদস্য থাকার পর নমিনেশন নিতে পারবে। এটা  আগের আরপিওতে ছিল, আবারও করতে হবে।

শনিবার (৩ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এফডিসি মিলনায়তনে শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিতর্কে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সর্বদা শ্রমিকের পক্ষে, আবার মালিককেও দেখার দায়িত্ব আছে। শ্রমিক একদিকে, মালিক অন্যদিকে আমরা সেটা চাই না। শিল্পখাতে আমাদের ব্যর্থতার কারণ অতীতের দুর্বৃত্তায়ন। যিনি কারখানার মালিক তিনি রাজনৈতিক দলের নেতা, তিনি সংসদে এমপি, এভাবেই অতীতে শাসন এবং শোষণ চলেছে। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রদের পাশাপাশি শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও প্রাণহানি ঘটেছে। এর পেছনে কারণ ছিল তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। সরকারের অবহেলাতেই রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ঘটেছে। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পরে রেশমা নামক নারীকর্মীকে উদ্ধার করা ছিল সাজানো নাটক।

তিনি বলেন, যেসব মালিক শ্রমিকের বেতন না দিয়ে বিদেশে পালিয়েছে বা আত্মগোপনে আছে তাদের বাড়ি, গাড়ি, জমি বিক্রি করে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করে বিদেশে পালিয়েছে, তাদের ধরে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির কথা বলেছি। আমার শ্রমিককে আমি দেখবো, মালিকদের এমন মানসিকতা গড়ে উঠেনি।

তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের নামে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল তা আওয়ামী লীগের ১৫ বছর শ্রমিকদের মুখ বন্ধ রাখার ফল বলে উল্লেখ করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, শ্রমিকরা যে মাত্রায় কথা বলবে সে মাত্রায় বলেনি। এ কারণে শিল্প এলাকাগুলোয় সন্ত্রাস হয়েছিল। আর রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় একটি পক্ষ এই অসন্তোষের মধ্যে ঢুকে গেছে।

সচিব বলেন, মালিকরা যেমন সংগঠিত হয়ে দাবি আদায় করে, নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলে, শ্রমিকদের সেভাবে সংগঠিত হতে হবে। তবে তা বাইরের বা কোনো সুবিধাভোগী স্বার্থের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নয়, শ্রমিকদের নিজেদের স্বার্থে, শিল্পের স্বার্থে কথা বলতে হবে।

সরকার মালিক পক্ষের হয়ে কথা বলবে না। সরকার সংবিধানে নির্দেশিত শিল্প ও শ্রমিকের পক্ষে কথা বলবে; উল্লেখ করেন এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

বিতর্কে শিক্ষার্থীরা বলেন, মালিক অধিকার দেবে কিন্তু তা বাস্তবায়ন করবে শ্রমিকরা। শ্রমিক সংগঠনগুলোর শ্রমিক ও শিল্পের স্বার্থে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা চালাবে। শ্রমিকরা সংগঠিত না হলে মালিকরা অধিকার দেবে না। অসংগঠিত শ্রমিকস্বার্থ মুরগির মতো। যা মালিকরা উদরস্থ করে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মে দিবস আসে যায়। দিবসটিতে নানা র‌্যালি, মিছিল-স্লোগান, সভা-সমাবেশের মাধ্যমে পালিত হয়। কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্য বদলায় না। যাদের শ্রমে-ঘামে দেশের চাকা ঘোরে, তাদের ভাগ্যের চাকা ঘোরে না। শ্রমিক অধিকার আদায়ের যে দিবস, সে দিবস তাদের স্পর্শ করে না। দেশের ৮ কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাংশ শ্রমিকেরই আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। শ্রমিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই, নেই কর্মস্থলে পরিচয়পত্র। অথচ, জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ১১২ জন শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষ শহীদ হয়েছেন। কয়েক হাজার শ্রমজীবী মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। এর মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তাই শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবি পূরণ না হলে, জুলাই বিপ্লবের অর্জিত সুফল ম্লান হয়ে যাবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতীত শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

মহান মে দিবস-২০২৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে এই ছায়া সংসদে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক মো. আলমগীর হোসেন, সাংবাদিক মো. তৌহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমান ও জনাব নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।