ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

৮০ বছর পর ইউরোপিয়ান ক্লাবে ‘প্রীতিলতা ভাস্কর্য’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১২
৮০ বছর পর ইউরোপিয়ান ক্লাবে ‘প্রীতিলতা ভাস্কর্য’

চট্টগ্রাম: ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বাংলার প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আত্মাহুতির জায়গা  চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবের স্মরণে দীর্ঘ ৮০ বছর পর ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা ভাস্কর্য’ তৈরি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় নগরীর পাহাড়তলীতে তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে (বর্তমান  রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়) স্মারক ভাস্কর্যের উদ্বোধন করা হয়।



চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম ভাস্কর্যের ফলক উন্মোচন করেন।

এসময় বীরকন্যা প্রীতিলতার ৮০তম আত্মাহুতি দিবস পালন কমিটির আহ্বায়ক বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী, ভৌতবিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল মনসুর, কমরেড মানস নন্দী ও অধ্যাপক ফেরদৌস আরা আলীম উপস্থিত ছিলেন।

বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী বলেন, বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মাহুতির ৮০ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি যে স্বপ্ন নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন তা দেশে আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শোষণ-লুণ্ঠন, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

তিনি বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী বিদেশি কোম্পানি ও তাদের এদেশীয় দোসরদের যোগসাজশে চলছে দেশের ভূলুণ্ঠিত প্রচেষ্টা। এর বিরুদ্ধে তরুণ-তরুণীদের প্রীতিলতাসহ বিপ্লবীদের সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। ’

প্রফেসর ড. জামাল নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করতে মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা আন্দোলন করে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন। আজকের তরুণেরা তাদের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দেশ মাতৃকার ডাকে এগিয়ে আসতে হবে। ’

অগ্নিযুগের বীরকন্যা প্রীতিলতার ভাস্কর্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় মেয়র মনজুর আলম বলেন, ‘প্রীতিলতা একটি সংগ্রামী চরিত্র। দেশকে ব্রিটিশদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে তিনি জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে বীর সেনানিদের বীরত্ব ও আদর্শ ছড়িয়ে দিতে দীর্ঘদিন পরে হলেও এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ’

ভাস্কর্য স্থাপনসহ এ আয়োজন তরুণ প্রজন্ম জাতির গৌরবময় অতীত ইতিহাস জানার সুযোগ পাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, ১০০ বছর আগে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে প্রীতিলতার জন্ম। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রথম নারী শহীদ, মাস্টারদা সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগী প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ‘ইউরোপিয়ান ক্লাব’ আক্রমণ করেন আট বিপ্লবী।

দাম্ভিক ব্রিটিশরা ‘কুকুর ও ভারতীয়রা নিষিদ্ধ’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে এই ক্লাবে বসেই বাংলার বিপ্লবীদের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচারের নানা পরিকল্পনা করত।

আক্রমণ শেষে গুলিবিদ্ধ প্রীতিলতা সহযোগীদের নিরাপদে পাঠিয়ে ইংরেজ সৈন্যদের হাতে ধরা না দিয়ে ‘পটাশিয়াম সায়ানাইড’ মুখে পুড়ে দিয়ে আত্মাহুতি দেন।

কিন্তু তার আত্মদানের স্মৃতি ধরে রাখতে ওই জায়গায় কোনো ব্যবস্থা ছিল না। নগরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৮০ বছর পর ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনের সড়কদ্বীপে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। কলকাতার ভাস্কর গৌতম পাল তাম্র দিয়ে প্রীতিলতার এই আবক্ষমূর্তি তৈরি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬  ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১২
এমবিএম/‌এআরএম





বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।