ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

বৈশাখী আয়োজনে পালপাড়ায় দম ফেলার ফুরসত নেই

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
বৈশাখী আয়োজনে পালপাড়ায় দম ফেলার ফুরসত নেই

নীলফামারী: আগামীকাল নববর্ষ। হাতে আর সময় নেই।

তাই নীলফামারীর সৈয়দপুরের কাশিরামের পালপাড়ায় দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। জিনিসপত্র ও খেলনাপাতি তৈরি করে রোদে সব শুকিয়ে নিয়েছেন। রংয়ের কাজও শেষ, এখন প্রস্তুতি চলছে সরবরাহের।  

পাইকার ও মেলার আয়োজকরা এখান থেকে সরাসরি নিয়ে যাচ্ছেন মাটির গাছ, ফুলের টব, ফলমূল, মাটির ব্যাংকসহ নানা রকমের খেলনা।  

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে চওড়া পালপাড়া গ্রাম। অবস্থান সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নে। এ গ্রামের ৩০০ পরিবার কুমারের কাজ করেন। মাটি এ কাজের প্রধান উপকরণ। পাশের চিকলী, যমুনেশ্বরী প্রভৃতি নদীর পলিমাটি সংগ্রহ করে পরিবারগুলো মাটির তৈজষপত্র, হাঁড়ি, কলসি, পিঠা তৈরির সরঞ্জামসহ কত কিছু তৈরি করে। এর পাশাপাশি কেউ কেউ তৈরি খেলনা।

কুমাররা জানান, খেলনা সামগ্রীর অনেক চাহিদা। ঈদ, দুর্গাপূজা, মহররম গ্রামীণ মেলায় এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। পূঁজির অভাবে আমরা চাহিদা অনুযায়ী খেলনা তৈরি করতে পারি না।  

সরেজমিনে গেলে কথা হয় সরস্বতী পালের সঙ্গে। তিনি জানান, হাতে সময় নেই কাল পহেলা বৈশাখ। সরস্বতী পাশের হাজারীহাট কলেজের ছাত্রী। তিনি বলেন, স্বামীকে সহযোগিতা করছি। তাছাড়া সবাই বলে, আমার হাতের রং নাকি খুব সুন্দর হয়। আমি নাকি রংয়ের শিল্পী।

সরস্বতীর স্বামী দীপক পাল। তিনি জানান, বৈশাখী মেলা উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে অর্ডার পেয়েছি। পাঁচ লাখ টাকার খেলনা নেবে তারা। এজন্য কুমার পাড়ার মানুষের ঘুম নেই। আমরা দুমাস ধরে কাজ করছি। মাটি দিয়ে খেলনা তৈরি পোড়ানো, রং করা এসব অনেক কষ্টের কাজ। এরই মধ্যেই ট্রাক আসবে। ওই ট্রাকে চেপে চলে যাবে খেলনাগুলো চট্টগ্রামে।

পালপাড়ার গোপলা চন্দ্র রায়ও খেলনা তৈরি করছিলেন। সুন্দর সুন্দর মুখাবয়ব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের প্রতিকৃতি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের অবমূর্তি। আরও কত কী?

অজয় পাল বললেন, পুঁজি সংকটে আমাদের অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু যদি এখানে ব্যাংকগুলো জামানতহীন ঋণ দেয়, তাহলে আমাদের তৈরি এসব খেলনা কেবল দেশে নয়, বিদেশেও বাজার পাবে। তিনি জানান, পালপাড়ার কুমারেরা ভালো কাজ করতে চায়। এবার বৈশাখে আমরা পাঁচ লাখ টাকার খেলনা বিক্রি করবো। প্রতিটি খেলনার পাইকারি দাম নিচে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এজন্য অবশ্য পূঁজির জোগান দিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকসহ কিছু কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লানচু হাসান চৌধুরী জানান, পালপাড়ার কুমাররা ভালো ভালো কাজ করছেন। তাদের জন্য অবশ্যই পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এরা বংশ পরম্পরায় এসব কাজ করে চলেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।