ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জেলি ফিশের তাণ্ডবে মাছ ধরায় আগ্রহ হারাচ্ছেন জেলেরা, গবেষণার তাগিদ 

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৪
জেলি ফিশের তাণ্ডবে মাছ ধরায় আগ্রহ হারাচ্ছেন জেলেরা, গবেষণার তাগিদ 

পাথরঘাটা (বরগুনা): জীবিকার তাগিদে ঝড় জলোচ্ছ্বাসে জীবনের ঝুঁকি, ভয় এবং আতঙ্ক নিয়ে মাছ শিকার করতে হয় জেলেদের। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে তাদের জালে ধরা পড়ছে অনাকাঙ্ক্ষিত জেলি ফিশ।

বিষাক্ত এই সামুদ্রিক প্রাণী বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার এলাকাগুলো যেন ছেয়ে ফেলেছে। ফলে জালে মাছের চেয়ে জেলি ফিশই বেশি ধরা পড়ছে। দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় দুই সপ্তাহ ধরে অসংখ্য জেলি ফিশ ভেসে আসছে। জেলি ফিশের তাণ্ডবে মাছ শিকার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন জেলেরা।  

সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে জেলি ফিশের তাণ্ডবে মাছ শিকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে কিছুসংখ্যক জেলে। বেশি দিন চলতে থাকলে মাছ শিকার বন্ধ করতে বাধ্য হবে জেলেরা। পাশাপাশি মৎস্য খাতও হুমকির মুখে পড়বে। এমনটিই জানিয়েছেন জেলে ও জেলে নেতারা।

জানা গেছে, সাগর উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক মাস ধরে অসংখ্য জেলি ফিশ ভেসে আসছে। এসব জেলি ফিশ শরীরে লাগলেই চুলকানি হচ্ছে। এতে সমুদ্রে মাছ ধরতে নামতে পারছেন না জেলেরা। ভেসে আসা জেলি ফিশ সৈকতে পচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি সাগরে মাছ ধরার সময় জালে জেলি ফিস ধরা পড়লে তা জাল থেকে ছাড়াতেও অনীহা জেলেদের।

ট্রলারের মাঝি আনোয়ার হোসেন, মাঝি এনায়েত হোসেন, জাহাঙ্গীর মাঝি বলেন, কয়েকদিন আগে পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাট থেকে তারা রসদ সামগ্রী নিয়ে গভীর সাগরে মাছ শিকার করতে যান। জাল ফেলে তোলার সময় জালের সঙ্গে জেলি ফিশ আসতে থাকে। একপর্যায়ে জেলি ফিশের তাণ্ডবে জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ করে জাল ফেলে রেখে খালি হাতে ঘাটে ফিরে আসেন।

তারা আরও বলেন, গত কয়েক মাস ধরে প্রচুর পরিমাণে জেলি ফিস ধরা পড়ে জালে। এ মাছটা এখনও কেউ খেয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মাছটি জালে ধরা পড়ার কারণে অন্য সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়ছে না। জেলি ফিসটি খুবই বিরক্তিকর; মাছটি খুব নরম এবং স্পর্শকাতর হওয়াতে জাল থেকে সরাতেও সমস্যা হচ্ছে। যার কারণে সাগরে এসে মাছ ধরার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে মৎস্য খাত হুমকির মুখে পড়বে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, অসংখ্য জেলি ফিশ সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। জাল ফেলার সঙ্গে সঙ্গে হাজারও জেলি ফিশ জালে আটকে যায়। যার ফলে জাল ট্রলারে উঠানো যায় না। এমন তথ্য গত কয়েক মাস ধরে আমাদের কাছে আসছে। ওই মাছটির প্রতি জেলেদের অনীহা সৃষ্টি হয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার আপু বলেন, জেলি ফিশের ঘটনাটি আমি ইতোমধ্যে জেনেছি। এই জেলি ফিশের জন্য বর্তমানে জেলেরা সাগরে যাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে লবণাক্ততার সৃষ্টি হয়ে এ জেলি ফিশের জন্ম হয়েছে বলে তার ধারণা।

শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগ চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের দেশে জেলি ফিশকে একপ্রকার অখাদ্য বা ব্যবহার অনুপযোগী সামুদ্রিক প্রাণী হিসেবে দেখা হলেও, বিশ্বে জেলিফিশের ৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে। জেলি ফিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে খাদ্য হিসেবে। চীন, জাপান ও কোরিয়ায় বহু বছর ধরে জেলি ফিশ জনপ্রিয় খাবার হিসেবে প্রচলিত আছে। জেলি ফিশের বহুবিধ ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে জেলি ফিশ থেকে সার, কীটনাশক, ওষুধ, কসমেটিকস, ডায়াপার ইত্যাদি তৈরি করা।

উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, সাগর ও উপকূলে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। যা সবগুলোই প্রাণিকুলের উপকারের জন্য। সাগরে মৎস্যসহ এমন সম্পদ রয়েছে যার অনেক কিছু নিয়ে গবেষণা হয়নি। বাংলাদেশে জেলি ফিস নিয়ে এখন গবেষণার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপকূলে ভেসে আসা এসব জেলি ফিশ ‘সাদা জেলি ফিশ’ নামে পরিচিত। যার বৈজ্ঞানিক নাম ফাইলোরিজা পাংটাটা (Phyllorhiza punctata)। এরা বিষাক্ত প্রজাতির নয়। তবে এ প্রজাতির জেলি ফিশের কিছুটা চুলকানি সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে। সাঁতার কাটতে না পারায় এরা বাতাস-স্রোত বা জোয়ারে সমুদ্র থেকে উপকূলে বা সৈকতে এসে আটকে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।