ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতারণা: অভিযোগপত্র দাখিল হলেও স্বপদে বহাল ডাক পরিদর্শক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৪
প্রতারণা: অভিযোগপত্র দাখিল হলেও স্বপদে বহাল ডাক পরিদর্শক সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক (শহর) মো. গোলবার হোসেন অনন্ত

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক (শহর) মো. গোলবার হোসেন অনন্তের বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। গৌর চন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তির করা মামলাটির অভিযোগপত্রও দাখিল হয়েছে।

কিন্তু তারপরও স্বপদে বহাল রয়েছেন গোলবার।

মামলার আসামি হয়েও কীভাবে তিনি সরকারি এ পদে বহাল রয়েছেন, সে ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে। এর কোনো উত্তর না দিতে পারলেও সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল আল আমিন বলেছেন, এ ব্যাপারে নিয়ম-নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, ২০২০ সালে সিরাজগঞ্জ শহরের বিএ কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা গৌর চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে রায়গঞ্জ উপজেলার ইচলাদিগর মৌজার বেশ কিছু জমি বিক্রি করতে চান ডাক পরিদর্শক গোলবার হোসেন অনন্ত গং। উভয়ের সম্মতিতে জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭৬ লাখ টাকা।

২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গৌর চন্দ্র রায় জমির বায়না হিসেবে গোলবার হোসেন অনন্ত গংকে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। কিন্তু সে বছর দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে দলিল সম্পাদন বন্ধ থাকে। রেজিস্ট্রি বায়না হওয়ার পর ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর শওকত হোসেন সেলিম নামে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আরও ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেন গৌর চন্দ্র।

২০২১ সালের ১৯ জুলাই মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ শাখা থেকে নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে গোলবার হোসেন অনন্তের অ্যাকাউন্টে আরও ১০ লাখ টাকা দেন গৌর চন্দ্র। জমি বাবদ মোট ৬০ লাখ টাকা তিনি বিক্রেতাকে বুঝিয়ে দেন। পরবর্তীতে গৌর চন্দ্র জমির বাকি ১৬ লাখ টাকা নিয়ে দলিল করে দিতে বললে গোলবার হোসেন তাকে জানান, জমি নিয়ে মামলা রয়েছে। মামলা শেষ হলে রেজিস্ট্রি দলিল করে দেবেন।

গৌর চন্দ্রের অভিযোগ, জমি নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পরও তিনি বা তারা এর দলিল করে দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে স্থানীয় মুরুব্বীরা একাধিকবার সালিস করেছেন। কিন্তু গোলবার হোসেন গং রায় মানেন না।

২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সকালে গৌর চন্দ্র রায় ১৬ লাখ টাকা নিয়ে গোলবার হোসেন অনন্তের বাড়ি যান গৌর। তাকে জমির দলির করে দিতে বলেন। কিন্তু গোলবার ও তার লোকজন গৌরের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। জমি ও টাকা কোনোটিই ফেরত দেবেন না বলে জানিয়ে দেন।

টাকা ফেরত না পেয়ে ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী গৌর চন্দ্র রায় বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার পান সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি তদন্ত শেষে গোলবার হোসেন অনন্ত, তার স্ত্রী আল্পনা পারভীন বেলীকে অভিযুক্ত করে গত ২ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।

মামলার তৃতীয় আসামি ছিলেন নুর নবী সরকার নামে এক ব্যক্তি। তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গৌর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, গোলবার জমি বিক্রি করতে চাইলে আমি সেটি কিনতে সম্মত হই। ৭৬ লাখ টাকার মধ্যে তাকে ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা নিয়ে আমি ঘুরছি। তাকে টাকা বুঝিয়ে দিয়ে আমি জমি ও সেটির দলিল চাইছি। কিন্তু সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক (শহর) মো. গোলবার হোসেন অনন্ত সেটি মানছেন না। বরং আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জমি বা টাকা কিছুই দিতে চাচ্ছেন না তিনি।

সরকারি একজন কর্মকর্তা হয়ে তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করছেন। এ ব্যাপারে আমি মামলা করেছি। সেটির অভিযোগপত্রও দাখিল করা হয়ে গেছে। মামলার আসামি হয়েও একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে বহাল থাকেন, সেটিও প্রশ্ন। প্রশাসন কি এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না?

এ বিষয়ে গোলবার হোসেন অনন্তের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও সেটি সম্ভব হয়নি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. সাইফুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, ভুক্তভোগী গৌর চন্দ্র রায়ের দায়েরকৃত প্রতারণা মামলাটি আমলে নিতে তদন্ত করার পর গত ২ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম আদালতের রায় অনুযায়ী চলবে।

সিরাজগঞ্জ প্রধান ডাকঘরের সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল আল আমিন বলেছেন, মামলার চার্জশিটের বিষয়ে আমার জানা নেই। মামলা যেহেতু হয়েছে,  রুলস দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।