ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘বল সুন্দরী’ চাষে লাখপতি সুশান্ত

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
‘বল সুন্দরী’ চাষে লাখপতি সুশান্ত

রাঙামাটি: পাহাড়ের মাটিকে যেকোনো ফসল চাষের জন্য আদর্শ ভূমি বলা হয়ে থাকে। উর্বর এ মাটিতে যে কোনো ফসলের বাম্পার ফলন হয়।

এই অঞ্চলের উর্বর ভূমিকে কাজে লাগিয়ে রাঙামাটির সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা ‘বল সুন্দরী’ বড়ই চাষ করে বেশ কয়েক বছরের মধ্যে লাখপতি বনে গেছেন। নিজে পেয়েছেন অর্থনৈতিক মুক্তি, গড়েছেন কয়েকজন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান।

জানা গেছে, নিজেকে স্বাবলম্বী গড়ে তুলতে এবং অর্থনৈতিক মুক্তি পেতে রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের সোনারাম কার্বারী পাড়ার বাসিন্দা জেলে সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা বেশ কয়েক বছর যাবত চেষ্টা করে গেছেন।  

অবশেষে ভাগ্য দেবী তার অধরাকে ধরা দিয়েছেন। নিজের জেলে পেশা বাদ দিয়ে তার মালিকানাধীন পাহাড়ি পতিত জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষাবাদ শুরু করেছিলেন। এরপর কৃষির প্রতি তার নেশা জেগে উঠে। ২০১৬ সালে তার পতিত ১০ একর জমিতে ‘বল সুন্দরী’ বড়ই চাষ শুরু করেন। কয়েক বছরের মধ্যে তাকে আর পেছন ফিরে থাকাতে হয়নি।

স্ত্রী, এক কন্যা সন্তান নিয়ে বসবাস করা সুশান্ত তার জমিতে ৫০০টি ‘বল সুন্দরী’ বড়ই গাছ রোপণ করেছিলেন। তার ঘাম জড়ানো পরিশ্রমে কয়েক বছরের মধ্যে গাছে ব্যাপক ফলন আসতে শুরু করে। গত মৌসুমে এসব গাছ থেকে তিনি ১০ লাখ টাকার বড়ই বিক্রি করেছিলেন। কর্মচারী এবং আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে তিনি লাভের টাকা নিজের পকেট ভরেছেন।

এইবারও মৌসুমের শুরুতে তিনি ৫০ হাজার টাকা বড়ই বিক্রি করে ফেলেছেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি সব গাছের বড়ই বিক্রি করে ফেলবেন। এসব বড়ই বিক্রি থেকে খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

সফল এ কৃষি উদ্যোক্তা বড়ই চাষের পাশাপাশি তার বাগানে সুপারি, ড্রাগন, কলা, পেঁপে, মাল্টা, নারকেল, লটকন, লিচু, কাঁঠাল এবং সবজির মধ্যে বেগুন, টক ফলসহ ২০ প্রজাতির ফলের চাষ করেছেন।

বরইয়ের মৌসুম শেষ হলে অন্যান্য ফসলের উৎপাদন শুরু হবে। এসব উৎপাদিত ফল থেকে তিনি আরও কয়েক লাখ টাকা ঘুরে তুলবেন। পুরো বছর জুড়ে তার বাগানে ফলের মেলা থাকে।

বাগানের শ্রমিক সুকামার চাকমা বাংলানিউজকে জানান, তারা এ বাগানে কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভাল আছেন। তারাও এ বাগানের মালিকের কাছ থেকে শিখে নিজেদের পতিত জমিতে খুব শিগগিরই চাষাবাদ শুরু করবেন।

বাগানের মালিক সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা বাংলানিউজকে বলেন, পেছনে না ঘুরে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিই। একজন উদ্যোক্তাই আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এ কৃষি উদ্যোক্তা আরও বলেন, জীবনে বড় হতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম ছাড়া বড় হওয়া যায় না।

রাঙামাটি সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (মানিকছড়ি ব্লক) সোহেল রানা বলেন, সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ নির্মাণ করা। এ অঞ্চলে সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যার মতো কৃষির উন্নয়নে যারা কাজ করছেন তাদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।