ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আঞ্চলিক মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণহীন, বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৪
আঞ্চলিক মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণহীন, বাড়ছে দুর্ঘটনা-প্রাণহানি মৌলভীবাজারে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের জগন্নাথপুর এলাকায় অসম্পূর্ণ একটি স্পিড ব্রেকারের কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনা।  

মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)  স্পিড ব্রেকারটি দুই মাস ধরে অসম্পূর্ণ রাখায় এবং রঙ না দেওয়ায় বাড়ছে আরও দুর্ঘটনার শঙ্কা।

এরই মধ্যে ওই স্পিড ব্রেকার পারাপারের সময় চালক দেখতে না পেয়ে রডবাহী ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো- ট ৪৩-৫৪) স্টিয়ারিং বিকল হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের নির্মাণাধীন ভবনের সামনের অংশ। ভেঙে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা পল্লী বিদ্যুতের একটি খুঁটিও। পরবর্তী সময়ে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত খুঁটিটি অপসারণ করে। পরে নতুন খুঁটি স্থাপন করা হলে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ।

চলতি মাসের ১১ জানুয়ারি মধ্য রাতের এ ঘটনায় কোনো হতাহত না হলেও ট্রাকটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ছয়দিন পর ১৭ জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে পাথরবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে প্রাইভেটকারের সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাইভেটকারটির সামনের অংশ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান ওই প্রাইভেটকারের চার যাত্রী।

ওই দুটি ঘটনারই মূল কারণ স্পিড ব্রেকারে রঙ না থাকা। কেননা, রঙ না থাকায় চলতি পথে চালক দেখতে পান না স্পিড ব্রেকার। এছাড়া রাতে থাকে ঘন কুয়াশা। এসব ঘটনা ছাড়াও সামনে আরও বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা স্থানীয়দের মধ্যে।  

এছাড়াও স্পিড ব্রেকার পারাপারের সময় যানবাহনগুলো ধাক্কা খেয়ে বিকট শব্দ হয়। এতে গাড়ির নাট-বল্টু খুলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। রাতে প্রায়ই গাড়ির ওই বিকট শব্দের কারণে আশপাশের বাড়িঘরের লোকজনের মধ্যেও তৈরি হয় আতঙ্ক।  

এলাকাবাসী ও স্থানীয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সওজ বিভাগ স্পিড বেকারটি স্থাপন করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল দুর্ঘটনা রোধসহ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু এখন এটি দুই মাস ধরে অসম্পূর্ণ থাকায় দুর্ঘটনার রোধের বিপরীতে বেড়ে চলেছে দুর্ঘটনা।

ওই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. আমরু মিয়া আল এমরান বলেন, স্পিড ব্রেকার দেওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু এটা অসম্পূর্ণ থাকায় দুর্ঘটনা বেড়েছে।  

তিনি বলেন, আমি নিজেও তাদের অফিসে গিয়ে বিষয়টি জানিয়ে এসেছি, তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু তিনদিন পার হলেও সমাধান হয়নি। এটা নিশ্চয়ই তাদের অবহেলা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ নভেম্বর এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা জহুরা বিউটি মৌলভীবাজার সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, মূল সড়কের পাশে বিদ্যালয় হওয়ায় সড়কে দুর্ঘটনা একটা বড় সমস্যা। দ্রুতগামী গাড়ি চলাচলের কারণে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু ও শিক্ষার্থীসহ দুর্ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সড়কে দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সেখানে দ্রুত স্পিড ব্রেকার স্থাপনেরও অনুরোধ জানানো হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের এই আবেদনের দুদিন পরই সওজ বিভাগ সেখানে স্পিড ব্রেকার স্থাপন করে দেয়। কিন্তু দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত রঙ করে মার্কিং করা হয়নি।

জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা জহুরা বিউটি বলেন, আবেদনের পর দ্রুত স্পিড ব্রেকার স্থাপন করে দেয় সড়ক বিভাগ। তবে রঙ না দেওয়ায় এখানে আবারও দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।  

তিনি বলেন, বিষয়টি ফোনে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও ব্যবস্থা নেয়নি। দুই মাস ধরে পদক্ষেপ না নেওয়াটা দুঃখজনক।

এদিকে, দুর্ঘটনাসহ বিষয়টি নিয়ে সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ একাধিক কর্মকর্তাকে বারবার জানালেও নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

মৌলভীবাজার সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে, রোদ না থাকায় স্পিড ব্রেকারে রঙ দেওয়া যাচ্ছে না। শিগগিরই সেখানে রঙ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২৪
বিবিবি/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।