ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হাতিরঝিলে সরলেও পান্থকুঞ্জে থাকছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৩
হাতিরঝিলে সরলেও পান্থকুঞ্জে থাকছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প

ঢাকা: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যানজট এড়িয়ে যেন যানবাহনগুলো নগরীর বাইরে যেতে পারে।  

কিন্তু পিপিপির আওতায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে নির্মাণ করায় অতিরিক্ত টোল আদায়ের জন্য নকশায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে র‍্যাম্প (ওঠা-নামার রাস্তা) নামানোর কারণে শঙ্কা জাগে নগরীতে যানবাহনের চাপ আরও বৃদ্ধির।

 

এজন্য গত ৮ মে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ১৭ তম সভায় রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন অতিরিক্ত র‍্যাম্প নামানোর বিরোধিতা করে।  

তবে ধোপে টিকেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দাবি। তাদের দাবি উপেক্ষা করেই পলাশীতে একটি র‍্যাম্প ওঠানো ও পান্থকুঞ্জে একটি র‍্যাম্প নামানোর সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে।  

গত ৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কর্তৃপক্ষের এক সভায় সেই আপত্তি নাকচ করা কাজ এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  

তবে হাতিরঝিল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন সিদ্ধান্ত না নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কারণে হাতিরঝিলে নামানো হচ্ছে না কোনো র‍্যাম্প।  

বিভিন্ন সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া এ সভায় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জটিলতা নিরসন করে কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার  বলেন, ‘এখন সব বাধা দূর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নকশা অনুযায়ী কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুত গতিতে কাজ চলছে, এখন কোন সমস্যা নেই। ’ 

আর চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই উত্তরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ খুলে দেওয়া হবে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।

পান্থকুঞ্জ নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে এ প্রকল্পের পরামর্শক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, শুধু ৯টি পিলার যাবে পান্থকুঞ্জের পাশ দিয়ে। সেটির নিচেও সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। আর পার্কের বাইরে সুন্দরবন হোটেলের বিপরীত দিকে একটি র‍্যাম্প উঠবে।  

হাতিরঝিলের জন্য নকশা বদল

গত ৮ মে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ১৭ তম সভায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানায়, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ৪১টি খুঁটি হাতিরঝিল লেকে পড়বে।  

এর কারণে হাতিরঝিল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানায় সংস্থাটি। তারপরই নকশায় সামান্য পরিবর্তন করে হাতিরঝিলের বদলে র‍্যাম্প ফেলা হচ্ছে বিয়াম মডেল স্কুলের পাশের সড়কে। যেখান থেকে যানবাহনগুলো বাংলামোটর মোড়ের আগে মূল সড়কে উঠবে।

হাতিরঝিলের নকশার বিষয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, শুরুতে হাতিরঝিলের সোনারগাঁও হোটেলের পাশের অংশে জলাধার নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে সেখানে একটি র‍্যাম্প ছিল। পরে নকশাতে র‌্যাম্পটির স্থানটি পরিবর্তন করা হয়। এখন সেই র‍্যাম্প নামবে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশ দিয়ে। এর সঙ্গে ঝিলের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।  

হাতিরঝিলের জলাধার নিয়ে আলাদাভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে এ পরিকল্পনাবিদ বলেন, হাতিরঝিল অংশের জন্যে অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। যেন হাতিরঝিলের উপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে।

যথাসময়ে কাজ না হলে জরিমানা 

প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হওয়া বিশেষ এ সভায় দ্রুত কাজ শেষ করতেও নির্দেশনা দেওয়ার প্রধান কারণ 'জরিমানা'।  

মূলত, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করতে পারলে প্রতিদিন ৮ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

এই জরিমানা যেন দেওয়া না লাগে এজন্যই দ্রুত কাজ শেষ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।  

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, সভায় স্থপতি ইকবাল হাবিব ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামছুল হক প্রধানমন্ত্রীর সামনে এক্সপ্রেসওয়ের দ্বিতীয় অংশের বিস্তারিত নকশা তুলে ধরেন।  

২০২০ সালে করা এই নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ করার পক্ষে মত দেন প্রকল্পের এই দুই বিশেষজ্ঞ।  

তারপর প্রধানমন্ত্রী নকশা অনুমোদন দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের বাধাগুলো কাটিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে হাতিরঝিলের জলাধার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই দিকেও নজর দিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।  

রাজস্ব পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন 

এ জটিলতা ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই প্রকল্প থেকে রাজস্ব চেয়েছিল। সেটিকেও অযৌক্তিক বলছেন বিশেষজ্ঞ ও এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ।  

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা  বলেন, এই প্রকল্প মূলত সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) চলছে। কাজ শেষ হওয়ার পর শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্থ পাবে। সেখানে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর তাই তারা কাজে বাধা দিয়েছে।  

প্রসঙ্গত, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। আর ৯ বছর পরে ২০২০ সালে শুরু হয় নির্মাণকাজ।  

এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বাকিটা দেবে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড ৫১ শতাংশ, চীন শ্যাংডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল গ্রুপ ৩৪ শতাংশ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন ১৫ শতাংশ।  

বনানী, মগবাজার, কুতুবখালী-এই তিন অংশ মিলিয়ে প্রকল্পের সর্বমোট কাজ শেষ হয়েছে ৫৬ শতাংশ কাজ।  

এর মধ্যে বনানী অংশে শেষ হয়েছে প্রায় ৯৩ শতাংশ কাজ। তবে শুধু বনানী নয়, তেজগাঁও পর্যন্ত বর্ধিত করে ডিসেম্বরে এ অংশের উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।  

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৩, জুলাই ০৬, ২০২৩ 
এনবি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।