ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ময়নাতদন্তের পরও রাখা হলো আঁখি ও সন্তানের অঙ্গ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
ময়নাতদন্তের পরও রাখা হলো আঁখি ও সন্তানের অঙ্গ

ঢাকা: সেন্ট্রাল হসপিটালের অপচিকিৎসা ও প্রতারণার কারণে মৃত মাহবুবা রহমান আঁখি (২৫) ও তার সন্তানের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। তাদের শরীরের অঙ্গ (অর্গান) রাখা হয়েছে পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য।

পরিবারের কাছে মরদেহ দুটি হস্তান্তরও করা হয়েছে। এখন তাদের লাকসামে নিয়ে যাওয়া হবে দাফনের জন্য।

সোমবার (১৯ জুন) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে আঁখি ও তার সন্তানের ময়নাতদন্ত হয়। দুপুর সোয়া দুইটা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ময়নাতদন্ত করেন ঢামেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোখলেসুর রহমান।

গতকাল রোববার (১৮ জুন) দুপুরে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আঁখির। সন্ধ্যায় সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর আঁখি ও তার সন্তানের মরদেহ দুটি ঢামেক মর্গে পাঠায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ

তিনি জানান, পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য মা ও ছেলের শরীরে থেকে অর্গান রাখা হয়েছে। এগুলোর রিপোর্ট এলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

আঁখির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. মোখলেসুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে দুজনের অর্গান রাখার বিষয়ে ঢামেকের একটি সূত্র জানায়, আঁখির ভিসেরা, রক্ত, ফুসফুস ও কিডনি রাখা হয়েছে। তার সন্তানের ভিসেরা ও ফুসফুস রাখা হয়েছে। এসব কিছুই পরীক্ষার পর প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হবে।

ময়নাতদন্তের পর আঁখি ও তার সন্তানের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দাফনের জন্য তাদের নিয়ে যাওয়া হবে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়। সেখানে আঁখির বাবা মাহবুবুর রহমান মজুমদারে কবরের পাশে তাদের দাফন করা হবে। এ তথ্য জানিয়েছেন আঁখির চাচা শফিকুর রহমান মজুমদার।

তিনি বলেন, আঁখি ও তার সন্তানের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে লাকসামের গায়নের ডহরা গ্রামে। সেখানে আমার ভাইয়ের কবরের পাশেই তাদের দাফন করা হবে।

সোমবার সকালে আঁখির পরিবার যায় ঢামেক মর্গে। সেখানে তারা সেন্ট্রাল হসপিটালের লাইসেন্স বাতিলের দাবি তোলেন। একইসঙ্গে তারা তাদের অভিযুক্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার কঠোর শাস্তির দাবি করেন। এ ঘটনায় জড়িত সেন্ট্রাল হসপিটালের অন্যান্য চিকিৎসকদেরও শাস্তির দাবি করেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।

গত বুধবার (১৪ জুন) সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণার শিকার হন আঁখি। এ সময় তিনি মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়েন। তার আগে গত ৯ জুন দিবাগত রাত ১২টা ৫০ মিনিটে প্রসব ব্যথা ওঠায় আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু হাসপাতালের দ্বি-চারিতায় তার সন্তানের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় মোট ছয়জনের নাম উল্লেখ ও আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা করেন ইয়াকুব আলী। মামলায় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সংযুক্তার নামও রয়েছে। মামলার পর সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক শাহজাদী ও মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।

তার আগে গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই আঁখির সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।

গত ৯ জুন আঁখিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তার পরিবারের সঙ্গে ডা. সংযুক্তা সাহাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে। তাদের জানানো হয়, সংযুক্তা অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন। কিন্তু আদৌ তিনি হাসপাতালে ছিলেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
এজেডএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।