ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সেন্ট্রাল হসপিটালে রোগী টানতে চিকিৎসকদের ফেসবুকে পোস্ট নিষেধ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
সেন্ট্রাল হসপিটালে রোগী টানতে চিকিৎসকদের ফেসবুকে পোস্ট নিষেধ

ঢাকা: চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা ও প্রতারণার শিকার হয়ে মাহবুবা রহমান আঁখি (২৫) ও সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছে রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস পোস্ট করে রোগী বা রোগীর অভিভাবকদের আকর্ষণ করা থেকে বিরত থাকতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

রোববার (১৮ জুন) রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত হাসপাতালটির পরিচালক ডা. এম. এ. বি সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, হসপিটালের সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, নিজেদের প্র্যাকটিস বাড়ানোর লক্ষ্যে ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস পোস্ট করে রোগী বা অভিভাবকদের আকর্ষণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও মেডিকেল ইথিক্স পরিপন্থী।

এ ধরণের কোনো কার্যকলাপ নিজে বা তার নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি দ্বারা সম্পাদন করলে, ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। সদয় অবগতির জন্য নোটিশের অনুলিপিটি হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. মতিওর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা এম. এ. কাশেমের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নোটিশটি কার্যকর করার জন্য এর অনুলিপি হাসপাতালের সব উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে অপারেশন থিয়েটার ও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সেবা মানসম্মত না হওয়ায় ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার স্থগিতের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস)। গত শুক্রবার (১৬ জুন) অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের একটি দল হাসপাতালটি পরিদর্শনের পর এ নির্দেশনা জারি করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. শেখ দাউদ আদনান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন, সার্জারি স্থগিত রাখতে সেন্ট্রাল হসপিটালকে লিখিত আদেশ দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিতে আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ডা. সংযুক্তাকে হাসপাতালে সেবা দেওয়া হতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য নির্দেশের মধ্যে আছে-ভুক্তভোগীর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করা, আইন অনুযায়ী রোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের কাছে পাঠানো।

রোববার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আঁখির। এর আগে গত ৯ জুন সেন্ট্রাল হসপিটালে সি-সেকশন সার্জারির সময় তার সন্তানের মৃত্যু হয়। এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উল্লেখ করেন আঁখির এক বান্ধবী। ফলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সেন্ট্রাল হসপিটাল ও হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা।

উল্লেখ্য, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই আঁখির সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা। গত ৯ জুন আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তার পরিবারের সঙ্গে ডা. সংযুক্তা সাহাকে নিয়ে মিথ্যাচার করে। তাদের জানানো হয়, সংযুক্তা অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন। কিন্তু আদৌ তিনি হাসপাতালে ছিলেন না। হাসপাতালের এমন দ্বি-চারিতায় সিজারে সন্তান জন্ম দেওয়ার একদিন পর তার সদ্যজাত সন্তানের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়েন তিনি নিজেও। শেষ আজ রোববার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন আঁখি। বর্তমানে তাদের দুইজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

এ ঘটনায় গত বুধবার (১৪ জুন) ধানমন্ডি থানায় মোট ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা করেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী। মামলায় হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সংযুক্তার নামও রয়েছে।

মামলার পর বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক শাহজাদী ও মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।