ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নিজের পাকিস্তানি পাসপোর্ট পুড়িয়ে দেশে ফিরে আসেন ডা. জাফরুল্লাহ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
নিজের পাকিস্তানি পাসপোর্ট পুড়িয়ে দেশে ফিরে আসেন ডা. জাফরুল্লাহ

ঢাকা: সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পাকিস্তানি পাসপোর্ট পুড়িয়ে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সে সময় তিনি রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসে এফআরসিএস অধ্যয়নরত ছিলেন।

 

পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতার কথা জানতে পেরে পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সমরাস্ত্রের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। গড়ে তোলেন ফিল্ড হাসপাতাল।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে লন্ডনে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন। এপ্রিলে হাইড পার্কের সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ নিজের পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিড়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। তখন তিনি রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক।  

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে ‘রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকের’ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে সংগ্রহ করেন ভারতীয় ভিসা। নানা নাটকীয়তার পর ফিরে আসেন ভারতে।

‘একাত্তরের দিনগুলি’ বইতে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্পর্কে লিখেছেন, ‘চেনা হয়ে উঠেছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডা. এম এ মোবিন। এরা দুজনে ইংল্যান্ডে এফআরসিএস পড়ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে লন্ডনে চার বছর হাড়ভাঙা খাটুনির পর যখন এফআরসিএস পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ বাকি, তখনই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু। ছেলে দুটি পরীক্ষা বাদ দিয়ে বাংলাদেশ আন্দোলনে অংশ নিলো, পাকিস্তানি নাগরিকত্ব বর্জন করল, ভারতীয় ট্রাভেল পারমিট জোগাড় করে দিল্লিগামী প্লেনে চড়ে বসল। উদ্দেশ্য ওখান থেকে কলকাতা হয়ে রণাঙ্গনে যাওয়া। প্লেনটা ছিল সিরিয়ান এয়ারলাইনসের। দামাস্কাসে পাঁচ ঘণ্টা প্লেন লেট, সবযাত্রী নেমেছে। ওরা দুইজন আর প্লেন থেকে নামে না। ভাগ্যিস নামেনি। ‘পলাতক পাকিস্তানি দুই নাগরিককে’ গ্রেপ্তার করার জন্য এয়ারপোর্টে এক পাকিস্তানি কর্নেল উপস্থিত ছিল।

তিনি লিখেছেন, প্লেনের মধ্য থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না। কারণ, প্লেন হলো ইন্টারন্যাশনাল জোন। দামাস্কাসে সিরিয়ান এয়ারপোর্ট কর্মকর্তা ওদের দুইজনকে জানিয়েছিল যে, ওদের জন্যই প্লেন পাঁচ ঘণ্টা লেট। এমনভাবে ওরা বিপদের ভেতর দিয়ে শেষ পর্যন্ত মে মাসের শেষে সেক্টর টু রণাঙ্গনে গিয়ে হাজির হয়। ’

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাতে মৃত্যুবরণ করেন এই মহান দেশপ্রেমিক। মৃত্যুর আগে কিডনি জটিলতার পাশাপাশি অন্যান্য বার্ধক্যজনিত রোগও পেয়ে বসেছিল ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শরীরে। তবে তিনি ছুটে চলছিলেন নিজের মতোই।

সম্প্রতি, শরীর একদমই খারাপ হয়ে যায়। ভর্তি হন নিজের সার্বক্ষণিক কর্মস্থল নগর গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে। সোমবার (১০ এপ্রিল) নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। তার আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনোভাবেই রাজি করানো যায়নি। দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে দেশের মাটিতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবেন—এমন সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। সবশেষ মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা বৃথা করে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
এইচএমএসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।