ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মেঘনার পানি দূষণে মরে ভেসে উঠছে জলজ প্রাণীসহ মাছ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২৩
মেঘনার পানি দূষণে মরে ভেসে উঠছে জলজ প্রাণীসহ মাছ!

চাঁদপুর: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া এলাকায় মেঘনা নদীতে পানি দূষণের কারণে নির্বিচারে মারা পড়ছে জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণী।  

রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গার কল-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পানিতে মিশে দূষণের সৃষ্টি করছে বলে দাবি স্থানীয় জেলেদের।

গত কয়েক বছর শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ বর্ষার পানি আসার আগ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয়রা।

পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে মৎস্য বিজ্ঞানীরাও প্রাথমিক পর্যায়ে এর সত্যতা পেয়েছেন। তারা বলছেন, নদী দূষণ বন্ধ করা না গেলে আগামীতে মেঘনায় ইলিশসহ সব রকম মাছের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নদী তীরবর্তী এলাকায় এখন ঘুরে ঘুরে উড়ে উড়ে মনের আনন্দে উদরপূর্তি করছে এক ঝাঁক কাক। তবে কোনো অনুষ্ঠানে ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট নয়, মেঘনা নদীর তীরে মরে পড়ে থাকা মাছ ভক্ষণ করে। এখন প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের বাবু বাজার এলাকার মেঘনা নদীর তীরে।

সম্প্রতি ওই ইউনিয়নে মেঘনার পানি দূষণের ফলে বাবু বাজার, ইস্পাহানির চর, গজারিয়া, ষাটনল, সটাকি, মহনপুর, এখলাসপুরসহ প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে নদীর সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে তীরে। জাটকা, পোয়া, বেলে, চেউয়া, চিংড়ি, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ নদীতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনাসহ বেঁচে নেই কোনো জলজ প্রাণী। নদীর তীরে পড়ে থাকা এসব মাছ পচে, গলে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনছে। দুর্গন্ধের পাশাপাশি কালচে বর্ণ ধারণ করে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে নদীর পানি।

মতলব উত্তর উপজেলার বাবু বাজার এলাকার জেলে কৃষ্ণা দাস জানান, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য মেঘনা নদীতে ছড়িয়ে পড়ায় সব মাছ মরে তীরে ভেসে উঠেছে। গত কয়েকদিন ধরে শতশত মানুষ মৃত মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।  

অনেক মাছ নদীর তীরে পচে গন্ধ ছড়াচ্ছে। কাক, চিল খাচ্ছে এসব মাছ। সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাটকা রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নদীতে। অথচ পানি পচে গিয়ে জাটকাসহ সব মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরা কি ধরব নদীতে।

একই এলাকার আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলে শীতল বর্মন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে শীতের মৌসুমে নিয়মিতভাবে মেঘনার পানি দূষণের শিকার হচ্ছে। বর্ষার মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধির আগ পর্যন্ত থাকে এর স্থায়ীত্ব। ক্রমশ দূষণের তীব্রতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ছড়াচ্ছেও বেশি। এভাবে চলতে থাকলে ইলিশসহ কোনো মাছই থাকবে না নদীতে। আর নদীতে মাছ না থাকলে আমরা ধরবটা কি, খাবই বা কি? আমাদের দাবি যে করেই হোক এই দূষণ বন্ধে অচিরেই সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।

পানি দূষণের সংবাদ পেয়ে মতলব উত্তর ঘটনাস্থলে গুণাগুণ পরীক্ষায় ইতোমধ্যে নদীর পানি সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মেজবাবুল আলম। পানি দূষণের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে কল-কারখানার বর্জ্য দায়ী বলে মনে করছেন তারা। উচ্চতর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দূষণের মূল কারণ জানা যাবে বলে জানান তিনি। তবে সহসায় দূষণ রোধে স্থায়ী সমাধান না করা গেলে চাঁদপুরে ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন তিনি।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ মৎস্য বিজ্ঞানী ড. আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি জানার পরে একজন মৎস্য বৈজ্ঞানিককে বিশেষভাবে দায়িত্ব দিয়েছি পানি পরীক্ষার জন্য। প্রাথমিকভাবে আমরা বুঝতে পেরেছি পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে। যেখানে ‘ডিও’ অক্সিজেনের মাত্রা ৮.৫ থাকার কথা। বর্তমানে সেখানে ৩ এর নিচে আছে।

তিনি আরও বলেন, এক সময় আমরা পানির এই অক্সিজেনের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করেছি। কত ভয়ানক অবস্থা হলে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠতে পারে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে মাছের খাবারও কমে যাবে। এ বিষয়ে আমরাও খুবই চিন্তিত।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।