ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এটিএম বুথে মুজিব কয়েন দিলেই মিলছে সুপেয় পানি

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
এটিএম বুথে মুজিব কয়েন দিলেই মিলছে সুপেয় পানি

পাইকগাছা (খুলনা) থেকে ফিরে: সাধারণত এটিএম বুথে কার্ড প্রবেশ করালে টাকা বের হয়। কিন্তু এ এটিএম বুথটি ব্যতিক্রম।

এখানে কয়েন প্রবেশ করালে বের হয় সুপেয় পানি। তবে যে সেই কয়েন নয়, হতে হবে দুই টাকার মুজিব কয়েন। একটি দুই টাকার মুজিব কয়েন এটিএম বুথে প্রবেশ করালে বের হয়ে আসবে দুই লিটার সুপেয় পানি।  

ভিন্ন রকম এ ওয়াটার এটিএমটি বসানো হয়েছে দেশের দক্ষিণ উপকূলের প্রান্তিক জনপদ পাইকগাছার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। লবণ পানির তীব্রতার কারণে এ অঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনদের পানের জন্য একটু সুপেয় পানির ব্যবস্থা ছিল না এ হাসপাতালে। অসহনীয় এ পানির কষ্ট দূর করতে অভিনব এ ওয়াটার এটিএমটি স্থাপন করে স্থানীয় ‘কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটি’। সহযোগিতায় ছিল বেসরকারি সংস্থা ওয়াটারএইড, নবলোক, এইচএসবিসি ওয়াটার প্রোগ্রাম ও স্থানীয় পৌরসভা।  

২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর প্রকল্পটি চালু হয়। সেই থেকে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের পানের পানির কষ্ট লাগব হয়। অল্প টাকা খরচে সহজেই মিলছে ফিল্টারিং নিরাপদ পানি।  

হাসপাতালটির দায়িত্বে থাকা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নীতিশ গোলকার বলেন, এ প্রকল্পের কারণে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা শতভাগ নিরাপদ পানি পাচ্ছে। আগে এ হাসপাতালে নিরাপদ সুপেয় পানির কোনো ব্যবস্থা ছিল না। টিউবওয়েলের পানি ছিল লোনা ও আর্সেনিক যুক্ত। বেশ কিছুদিন পৌরসভা থেকে সুপেয় পানি আনা হলেও সেই পানির বিল সংশ্লিষ্ট দফতরকে পাঠানো হলে সেখান থেকে বিল পাস হয়ে আসেনি। তৈরি হয় জটিলতা। অবশেষে স্থানীয়রা ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা উদ্যোগ নেওয়ার পর পানির সংকট মিটছে।  

কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটির সভাপতি ও পাইকগাছা পৌরসভার মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, পাইকগাছায় লোনা সংকট তীব্র। এখানে টিউবওয়েল ও পুকুর সবখানে লবণ। মিঠা পানির উৎস খুব কম। পানি নিয়ে নিদারুণ কষ্ট করছে এ অঞ্চলের মানুষ। হাসপাতালে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা সুপেয় পানির অভাবে কষ্ট করে। সেই কষ্ট লাঘবে কয়েকটি পক্ষের যৌথ উদ্যোগে এ প্রকল্প। এটির মাধ্যমে মৌসুমের বৃষ্টির পানিকে সংগ্রহ করে ফিল্টারিং করে মানুষের পানের উপযোগী করা হচ্ছে। এর ফলে সর্ব সাধারণ উপকৃত হচ্ছে।  

বেসরকারি সংস্থা ওয়াটারএইডের প্রোগ্রাম অফিসার (ইঞ্জিনিয়ারিং) ইয়াসিন অরাফাত বলেন, হাসপাতাল ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টির মৌসুমে পানি সংগ্রহ করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ফিল্টারিং করে তা নির্দিষ্ট ট্যাংকে রাখা হয়। এরপর সেই ট্যাংক থেকে যায় ওয়াটার এটিএমে, সেখান থেকেই মানুষ পানি সংগ্রহ করেন।  

তিনি বলেন, এখানে ১০ হাজার লিটারের তিনটি ট্যাংক ও তিন হাজার লিটারের তিনটি ট্যাংকে ৩৯ হাজার লিটার পানি সংগ্রহ করা যায়।  

এ প্রকৌশলী আরও বলেন, বৃষ্টির এ পানি অন্য যেকোনো পানি থেকে গুনে-মানে ভালো। কয়েক ধাপে ফিল্টারিং করে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে পানিগুলোকে পানের উপযোগী করা হয়।  

হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা হাসিনা বেগম নামে একজন বলেন, আগে হাসপাতালে এলে পানের পানির জন্য বাইরে যেতে হতো। এখন আর বাইরে যাওয়া লাগে না। হাসপাতালের ভেতরেই পানির সুব্যবস্থা আছে। দুই টাকায় দুই লিটার পানি পাওয়া যায়।  

তিনি বলেন, পাইকগাছার বাজারে যেসব পানি পাওয়া যায় সেসব পানি থেকে এখানকার ওয়াটার এটিএমের পানি খেতে ভালো ও পরিষ্কারও।  

আবুল হাশেম, কবির আহম্মদ ও রোকসানা বেগমসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তারাও এ পানির বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন।  

দক্ষিণ-পশিম উপকূলের হাসপাতালগুলোর জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা প্রয়োজন: 
সুপেয় পানির সংকট শুধু এ পাইকগাছায় নয়। কয়রা, দাকোপসহ খুলনার বাকি উপজেলা এবং সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায়ও সংকট প্রকট। এসব এলাকায় হাসপাতালের কমপ্লেক্সগুলোতে যে টিউবওয়েল রয়েছে তাতে লোনা পানি। অন্য কাজ সারা গেলেও তা পানের অযোগ্য।  

পানি ব্যবস্থাপনায় সারাদেশের অন্য হাসপাতালগুলো থেকে লোনা সংকটপ্রবণ এলাকাগুলোর হাসপাতালগুলোর জন্য ভিন্ন ব্যবস্থাপনা থাকার দাবি উঠছে তৃণমূল থেকে। হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, সরকার এটার জন্য আলাদা পরিকল্পনা নিতে পারে। এটা ছাড়া বিকল্প নেই।  

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নীতিশ গোলকার বলেন, উপকুলের এ হাসপাতালগুলোর প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে পানের পানির তীব্র সংকট। এটা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টরা আলাদা পরিকল্পনা নিতে পারে। পাইকগাছার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ প্রকল্পকে মডেল ধরেও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।  

এ প্রসঙ্গে কথা হয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাহার উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, যদি কোনো হাসপাতালে সুপেয় পানির সংকট প্রকট হয় তাহলে স্থানীয় সরকার বিভাগ কিংবা স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে আবেদন করা যেতে পারে রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংয়ের বিষয়ে। তারা চাইলে আমরা সেখানে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি।

উপকূলীয় এলাকায় রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংয়ের জন্য নতুন একটি প্রকল্প এসেছে বলেও জানান এ প্রকৌশলী। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমেও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০২৩
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।