ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বৃদ্ধাশ্রমে ভালো নেই বাবারা, কেঁদে কেঁদেই সময় পার

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
বৃদ্ধাশ্রমে ভালো নেই বাবারা, কেঁদে কেঁদেই সময় পার

ভোলা: সব থেকেও যেন কেউ নেই তাদের। পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে তাদের।

এখন শেষ বয়সে একাকী জীবন পার করছেন তারা। কেউ খোঁজ নেয় না তাদের। সন্তানের কথা মনে পড়ে। ছুটে যেতে মন চায়, কিন্তু যেতে পারেন না। তাই কেঁদে কেঁদেই কাটে সময় তাদের।

এমনই নির্মম গল্প ভোলার বৃদ্ধ নিবাসের অসহায় বাবাদের। যাদের কেউ ভালো নেই। বৃদ্ধ নিবাস থেকে তাদের তিন বেলা খাবার দেওয়া হলেও স্বজন থেকে আলাদা থাকতে হচ্ছে- এমন কষ্ট আর অসহায়ত্বের কথা কারও কাছে বলতেও পারছেন না। তবুও সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই তাদের।

বৃদ্ধ নিবাসের বাসিন্দা বৃদ্ধ বাবাদের এমনই গল্প। যা অত্যন্ত নির্মম বলেই মনে করছেন অনেকে। তাই বাবাদের যেন এভাবে রাখা না হয়, সন্তানদের প্রতি সেই অনুরোধ সচেতন মহলের।

নিজাম-হাসিনা ফাউন্ডশনের অর্থায়নে পরিচালিত ভোলা সদরের পৌর কাঠালির বৃদ্ধ নিবাসে গিয়ে জানা গেছে, সদরের আলীনগর গ্রামের সামসল হক। সন্তানের ঘরে আশ্রয় হয়নি তার। সময় কাটেনা, তাই ৮৫ বছর বয়সেও নিপুণ হাতে জাল বুনে সময় কাটাচ্ছেন। এ জাল কোনো কাজে আসবে কি-না, তা জানা নেই বৃদ্ধ সামসল হকের।

সন্তানদের বুকে আগলে বড় করেছেন। সেই স্মৃতি মনে করে নীরবে কাঁদলেও ছেলের প্রতি তার নেই কোনো অভিমান, নেই কোনো অভিযোগ।

বৃদ্ধ সামসুল হক জানান, তার ৬ মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ঘরে আছে কেবল পুত্রবধূ। কিন্তু তার আচরণ সন্তোষজনক না। তার পরেও কোনো অভিযোগ নেই তার। জানালেন, এখানেই ভালো আছেন তিনি।  সন্তানের প্রতি কোনো অভিমান নেই।

আরেক বাবা আ. রশিদ। ছেলেকে বৃদ্ধাশ্রমে এসে দেখা করতে নিষেধ করেছেন। জানালেন, ছেলের সম্মানের কথা বিবেচনা করেই তাকে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। চাপা কষ্ট বুকে চেপে রেখেই জানালেন বৃদ্ধাশ্রমে ভালো আছেন তিনি।

আ. রশিদ বলেন, আমার কোনো অভাব নেই। তারপরেও এখানে থাকি। মাঝে মধ্যে বাড়িতে যাই, সবার সঙ্গে দেখা করতে।

কেবল সামসল হক কিংবা আ. রশিদ নন, তাদের মতো একই অবস্থা আ. মন্নান, ইউনুসসহ অন্য বাবাদেরও। যাদের বৃদ্ধাশ্রমে আসার গল্পটা ভিন্ন হলেও পরিণতি একই।

বর্তমানে এ বৃদ্ধনিবাসে থাকছেন ১৭ জন বৃদ্ধ বাবা। খাবার-সেবাযত্ন নিয়মিত চললেও সন্তানদের কথা মনে করেই কাঁদেন তারা। পরিবার থেকেও যেন নেই তাদের। কেউ খোঁজ নেয় না। যে সন্তানদের নিজ আদর-স্নেহে লালন-পালন করে বড় করেছেন, সেই সন্তনরা আজ আলাদা। কেউ অভাবের তাড়নায়, কেউবা ভরণপোষণের দায় এড়াতে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছেন বাবাদের।

ভোলা সদরের ভেদুরিয়া গ্রামের আরেক বাবা আ. মান্নান। ৬ ছেলে তার। তাদের কেউ চট্টগ্রাম, কেউবা ঢাকায় থাকেন। এক ছেলের বাসায় ঠাঁই হয়েছে মায়ের। কিন্তু বাবা থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে একা। পরিবার থেকে আলাদা। কেউ খোঁজ নেয় না।  স্ত্রী-সন্তানদের কথা মনে করেই তাই কাঁদেন নীরবে।

বৃদ্ধাশ্রমে বাবাদের এমন দুর্বিষহ দিন কাটলেও, স্বজনরা দেখা করতে আসেন না বলে জানালেন বৃদ্ধাশ্রমের ম্যানেজার সালেহ উদ্দিন সেলিম। তিনি বললেন, এভাবে সন্তানদের দূরে ঠেলে দেওয়া ঠিক না। প্রত্যেক সন্তানের উচিৎ, বাবাকে কাছে রাখা। এমন দিন আসবে, তারাও বৃদ্ধ হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে ভোলা সদরের পৌর কাঠালিতে ৫০ শয্যার এ বৃদ্ধ নিবাস প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে ৫০ জন বাবার আশ্রয় হলেও, বিভিন্ন সময়ে প্রিয়জন রেখে এখানেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন অনেকেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।