ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ জুন ২০২৪, ০৯ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রাঙামাটিতে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়েছিল ১৭ ডিসেম্বর

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২২
রাঙামাটিতে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়েছিল ১৭ ডিসেম্বর

রাঙামাটি: ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ডাক পৌঁছেছিল পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সেইদিন পাহাড়ের বাসিন্দরাও নিজ দেশকে শত্রু মুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেন।

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ রাঙামাটি ষ্টেশন ক্লাবের মাঠে মুক্তিযুদ্ধের অস্থায়ী ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করা হয়। তৎকালীন পার্বত্যঞ্চলের জেলা প্রশাসক হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুস সামাদ, পুলিশ সুপার বজলুর রহমান এবং মহকুমা প্রশাসক আবদুল আলীর নেতৃত্বে ও স্থানীয়দের সহায়তায় ক্যাম্পের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। ২৯ মার্চ রাঙামাটি থেকে ৬০ জনের একটি দল প্রশিক্ষণের উদ্দেশে ভারতে যাত্রা করে।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রসদ সরবরাহ এবং যানবাহনের জন্য রাঙামাটি আলম ডকইয়ার্ডে গড়ে ওঠে মুক্তিবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প। সেখানে স্থাপন করা হয় ওয়ারলেস সেন্টার। রাঙামাটি থেকে ভারতে যাওয়া প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি এক সপ্তাহের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে ক্যাপ্টেন আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ১৫ এপ্রিল রাঙামাটি ফেরেন। কিন্তু স্থানীয় লোকদের বিশ্বাসঘাতকার কারণে প্রথম দলটির সবাই রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলো এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নিহত হন।

দ্বিতীয় দলটি রাঙামাটি শহরের কাঠালতলীস্থ আলম ডকইয়ার্ডে অবস্থান নেয় এবং তৃতীয় দলটি সদর এলাকার বাকছড়িতে অবস্থান নেয়। তার পরের দিন তারা হানাদার বাহিনীর ওপর হামলা চালান।

৫ মে ১ নম্বর সেক্টরের অধীন ২৫ সদস্যের পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়। হেমদা রঞ্জন ত্রিপুরাকে কোম্পানী কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। ১ নম্বর সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল রাঙামাটির বরকল উপজেলার হরিণায়। আগস্ট মাসের শুরতে সেই সেক্টরের অধীনে হরিণা থেকে ৩০ কি. মি. দূরবর্তী ভারতের বৈষ্ণবপুরে সাব-সেক্টর স্থাপন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের বিএসএফ ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং প্রাপ্তদের একটি দল গ্রুপ কমান্ডার নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ৯ ডিসেম্বর কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ও বালুখালীতে গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করে। সে সময় গ্রুপ কমান্ডার নাজিম এবং মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জাফর শহীদ হন।

১১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে বেতবুনিয়াস্থ চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে অবস্থিত কালভার্টের ওপর হানাদার বাহিনীর একটি গাড়িতে গেরিলা আক্রমণ চালানো হয়। তাতে ওই গাড়ির ড্রাইভারসহ দুইজন পাকিস্তানি অফিসারের মৃত্যু হয়।

এদিকে আগস্টের মধ্যভাগে পাইলট মান্নানসহ মুক্তি বাহিনীর একটি দল পাহাড়ি এলাকায় রাতের অন্ধকারে পথ হারিয়ে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের পাকিস্থানি বাহিনীর ক্যাম্পে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় কয়েকজন বাঁচতে পারলেও বাকিরা সবাই নিহত হন। ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের পাকিস্থানি বাহিনীর ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দুইটি যুদ্ধ বিমান আক্রমণ চালায়। সেখানে ৭৫০ জন হানাদার সেনার অবস্থান ছিল।

অন্যদিকে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীরা জৈলানন্দ সিং এবং সুলতান আহমদ কুসুমপুরীর নেতৃত্বে ৫০০ মুক্তিযোদ্ধা রাঙামাটির বরকলে উপজেলায় অগ্রসর হন। ১৫ ডিসেম্বর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীরা ভোরে পাকিস্থান বাহিনীর ওপর আক্রমন করলে বিকেলে পাঞ্জাবীরা রাঙামাটির উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়। আর তাদের অনুসারী বাঙালি রাজাকার, আলবদর ও বেলুচ সৈন্যদের দলটি যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে।

রাঙামাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলরের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকবাল হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দেখা পায়। কিন্তু রাঙামাটিকে হানাদার মুক্ত করতে আমাদের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এদিন রাঙামাটি থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা পালিয়ে গেলে দুপুরে রাঙামাটি শহরের পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে ১৮ ডিসেম্বর সকালে শেখ ফজলুল হক মণি, এসএম ইউসুফ, শেখ সেলিম, কমান্ডার সুজান সিং ওভান রাঙামাটিতে এসেছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।