ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মামলা নিষ্পত্তির আগেই নারী ইউপি সদস্যের জমি দখল, প্রাণনাশের হুমকি

ডিষ্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
মামলা নিষ্পত্তির আগেই নারী ইউপি সদস্যের জমি দখল, প্রাণনাশের হুমকি

পাবনা: সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের বাবুলচারা গ্রামের সংরক্ষিত ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোছা. শাহানাজ পারভীন তার বসত-ভিটার জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন।

পারভীনের ভাষ্য, স্থানীয় বাসিন্দা মো. আক্কাস আলী আদালতের আদেশ অমান্য করে মামলা নিষ্পত্তির আগেই তার জমিজমা দখলে নিয়েছেন।

এমনকি তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিচ্ছেন।

তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বসতভিটার জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। সদর থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর থেকেই প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউপি সদস্য পারভীন ও আক্কাস আলী প্রতিবেশী। তারা দুজনই একই মালিকের কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন। এরপর থেকেই তাদের দুজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে মামলা করেন পারভীন। সেটি চলমান থাকা অবস্থায় তার জমিতে পাকা ঘর নির্মাণ শুরু করেন আক্কাস। পরে থানা পুলিশের তৎপরতায় নির্মাণ কাজ কয়েকদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

পরে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উভয়পক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন। সমস্যা সমাধানের জন্য আবেদন করেন দুজনই। কিন্তু পরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে পারভীনের জায়গায় পাকা ঘর নির্মাণ কাজ ফের শুরু করেন আক্কাস।

গত বৃহস্পতিবার ইউপি সদস্য পারভীন যে অভিযোগ করেন সেটি থেকে জানা গেছে, তিনি বনাম আক্কাসের মামলাটি পাবনা সহকারী জজ আদালতে চলমান। মামলার মোকদ্দমা নম্বর বাটোয়ারা ৯৪০/২০২১। বিজ্ঞ আদালতেও মামলাটি চলছে। চলতি মাসে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিবাদীরা নারী ইউপি সদস্যের নিজ নামীয় সম্পত্তি দখল করে অন্যায়ভাবে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। যেটি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। প্রভাবশালী দখলদারদের বাধা দিতে গেলে তারা বাদিকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।

ইউপি সদস্য মোছা. শাহানাজ পারভীন এ ব্যাপারে বলেন, আমি চার চারবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। গ্রামের সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছি। কিন্তু এখন আমার নিজের বসতবাড়ির জায়গা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। ২০০৯ সালে গ্রামের সামসুল হক ও মোছা. সালেহা বেগমের কাছ থেকে জমি কিনি। সেটি দখল ও নির্মাণ কাজের ঘটনায় বিজ্ঞ আদালত ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন।

স্থানীয় থানা পুলিশ বিবাদীদের নিষেধ করার পরও গোপনে তারা নির্মাণ কাজ করেন। কোনো বাধা কাজে আসছে না। আমি বাটোয়ারা মামলা করেছি। কিন্তু তারপরও তারা আদালতের আদেশ অমান্য করেছেন। আমি প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

পারভীনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পলাশ খান বলেন, উভয়পক্ষে দুটি দেওয়ানী মামলা বিচারাধীন। যার ওসি ৯৪০/২১ সদর কোট মোকদ্দমা শাহানাজ পারভীন বাদী পক্ষ। ওসি ৯৩/২১ সদর কোট মোকদ্দমা শাহানাজ পারভীন বিবাদী পক্ষ। উভয়পক্ষের নিজ নিজ মোকদ্দমায় নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করেছেন। উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত কারণ দর্শানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। উক্ত কারণ দর্শানোর আদেশ আপত্তি শুনানি না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি বিদ্যমান থাকবে।

আগামী তারিখে উভয় পক্ষের মোকদ্দমায় আপত্তি শুনানি হবে। দুটি মোকদ্দমা একসাথে বিচার হওয়ার জন্য বিজ্ঞ আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। শুনানি  না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষ কোনো কাজ করলে সেটি বে-আইনি হবে। এক্ষেত্রে বিবাদী পক্ষ সেখানে কাজ করলে আদালতের আদেশ অমান্য করা হবে।

মামলার বিবাদী আক্কাস এ ব্যাপারে বলেন, সামসুল হক ও মোছা. সালেহা বেগমের কাছ থেকে জমি আমিও কিনেছি। সেই জমির মালিকানা আমার, আমরা জমি পাবো। আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। সেই সময় শেষ। এখন আমরা কাজ করাচ্ছি, সেটি পুলিশ জানে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাবনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খাইরুজ্জামান বলেন, মামলায় ব্যাপারে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আমরা ওই জমি পরিদর্শন করেছি। বাদি পক্ষে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কাজ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা পরে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আদালতের দেওয়া সময় শেষ। এখন বিবাদী নতুন করে নির্মাণ কাজ করছেন কিনা আমার জানা নেই। আদালত এ ব্যাপারে আবার নির্দেশনা দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।