ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

আগাছায় ঢাকা পড়েছে নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২২
আগাছায় ঢাকা পড়েছে নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর আগাছায় ঢেকে গেছে নড়াইলের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর। ছবি: বাংলানিউজ

নড়াইল: আড়াই বছর আগে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও খোলা হয়নি একদিনও। চারপাশে এখন ময়লার ভাগাড় ও আগাছায় গজিয়ে ঢেকে গেছে নড়াইল জেলার মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরের চারপাশ।

অবহেলায় পরিত্যক্ত হয়ে আছে জাদুঘরটি। এটি দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের যেন কেউ নেই।

শিশুদের দোলনা, বসার ব্যবস্থা, টয়লেট, পানির ব্যবস্থা ও বেসিন, মোটর, লাইটসহ ইলেকট্রিক্যাল জিনিসপত্র খোয়া গেছে। নষ্ট হয়ে আছে বৈদ্যুতিক বাতি। সকাল-সন্ধ্যায় সেখানে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। উপরন্ত স্মৃতিফলকে দেওয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ভুল তথ্য থাকায় ক্ষুব্ধ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তবে দায় নিতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চের বিপরীতে চিত্রা নদীর পাড়ে আড়াই বছর আগে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ওই স্মৃতি জাদুঘরটি। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বভার নিতে অনীহা ও অবহেলায় খোলা হয় না গেট, মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করায় পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাড়াড়ে।

মনোরঞ্জন কাপুড়িয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক শামীমূল ইসলাম টুলু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের খুব কষ্ট লাগে, যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান অবহেলায় পড়ে থাকে। এটি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। অথচ কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।  

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম লিটন বাংলানিউজকে বলেন, এটা কী বানানো হয়েছে এবং কেন বানানো হয়েছে তা আমরা জানি না। এখন এটা বাজারের একটা শৌচাগারে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা ছাড়া আর কিছুই না।

জঞ্জালের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে লেখা মুক্তিযুদ্ধের ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা। এখানে ১ নম্বর পয়েন্টে লেখা হয়েছে ‘১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ নড়াইল ট্রেজারি ভেঙে অস্ত্র নিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু বাস্তবে তা হবে ২৭ মার্চ। দুই নম্বর পয়েন্টে লেখা হয়েছে ‘৮ মে ৮ জন ও ২৩ মে ৪৯ জন ইতনা গণহত্যায় শহীদ হন ৫৭ জন। বাস্তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গণকবরের শহীদ হওয়া ৮ জনের তথ্য ইতনার সঙ্গে লেখা হয়েছে।

এছাড়া ইতনার গণহত্যার প্রকৃত তারিখ হবে ২৩ মে, যা ইতনা গ্রামে গণহত্যার নামফলকে লেখা আছে। সেখানে গণহত্যায় ৩৯ জন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আরও ১১ শহীদ হন।



নড়াইলের মুত্তিযোদ্ধাদের এসব ভুল তথ্য নিয়ে সাবেক ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাডভোকেট এস এ মতিন ক্ষোভের সঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি অর্থায়নে মুক্তিযুদ্ধের বিষয় নিয়ে এ ধরনের ভুলভাল তথ্য খুবই দুঃখজনক। আমরা একাধিকবার বিষয়গুলো জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি।

জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান হিলু বাংলানিউজকে বলেন, কোথায় কিভাবে তৈরি হলো, তা আমরা জানি না। এসব কর্মকাণ্ড ও ভুল তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চের বিপরীতে চিত্রার পাড়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ ও মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় স্থাপনাটি তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্শাল ট্রেডার্স। ২০২০ সালের ২১ জুন ২২শ বর্গফুটের স্থাপনাটি ভিক্টোরিয়া কলেজকে হস্তান্তর করে এলজিইডি।

এ প্রসঙ্গে ঠিকাদার তরিকুল বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, কাজটি সমাপ্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের কাছে কাজটি বুঝে দেওয়া হয়। ভুল তথ্যের বিষয়ে বলেন, তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে যে তথ্য দেওয়া হয় তার ভিত্তিতে স্তম্ভে লেখা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুণ্ডু বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা নির্মাণ করেছি। এটা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারাই এটার দেখভাল করার কথা। স্মৃতিস্তম্ভে কোনো ভুল থাকলে তা দুঃখজনক।

ভিক্টোরিয়া কলেজের কাছে হস্তান্তর প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে চাবি দিয়েছিল এলজিইডি। কয়েক মাস আগে সেটি আবার নিয়ে গেছে। চাবি পেলে আমরাই রক্ষণাবেক্ষণ করবো। আজ অবধি চাবি ফেরত পাইনি।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্ব পালনকারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভিক্টোরিয়া কলেজ যদি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন না করলে আমরা পৌরসভা কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেখভালের দায়িত্ব দেব। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বসে ভুল সংশোধন করে এই ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ঠিক করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।