ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বেতন দিতে না পারায় পরীক্ষায় ফেল করানোর অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২২
বেতন দিতে না পারায় পরীক্ষায় ফেল করানোর অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ: বিশেষ ক্লাসের ১২ মাসের বেতন ৬ হাজার টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্রীকে নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩ বিষয়ে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি খোদ বিদ্যালয়টির সহকারি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

এর আগে নির্বাচনী পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে ৪০ মিনিট আটকে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগালও করা হয়। স্কুল শিক্ষকের এমন আচরণে ওই ছাত্রী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। শিক্ষার্থী ও তার বাবা এ কথা গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

আগামী বছর অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে গত বৃহস্পতিবার সে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আজিজুল হকের কাছে লিখিত আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘটনা খতিয়ে দেখতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

লিখিত আবেদনে দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের সূচনা দাস নিতু (রোল নং-৩) নামে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, গত ৮ নভেম্বর স্কুলে ভূগোল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হল থেকে তাকে ডেকে নিজ কক্ষে নিয়ে যান সহকারি প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার। এরপর তাকে বলেন, বিশেষ ক্লাসের বেতন দিতে পারো না তাহলে এই স্কুলে মরতে আসছো কেন? অন্য স্কুলে গিয়ে মরতে পার না। অনেক শিক্ষকের সামনে নিতুকে খুব বাজে ভাবে অপমান অপদস্থ করা হয়।

ওই সময় নিতু বারবার তার পরীক্ষার সময় নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে তাকে পরীক্ষার হলে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু লায়লা কর্ণপাত করেননি। ফলে নিতু ভূগোল পরীক্ষা খারাপ হয়। ওই ঘটনার পর দিন বিজ্ঞান পরীক্ষা থাকায় সেটিও তার খারাপ হয়েছে। ফেল করিয়ে দেওয়া হয় গনিতেও।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিতু বলেন, আমার বাবা একটি প্রতিষ্ঠানের গার্ড ও স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী। আমি নিজে টিউশনি করে আমার পড়াশোনার খরচ চালাই। আমার স্কুলের কোনো বেতন বকেয়া নেই এবং পরীক্ষার ফি দিয়েছি নিয়মিত। তবে স্কুলের বেতন ও নিজের খরচ চালানোর পর বিশেষ ক্লাসের বেতন দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ইতোপূর্বে আমি স্কুল থেকে বেতন মওকুফ চেয়েও পাই নি। তারা আমাকে বলেছে, স্কুলের বেতন পুরোপুরি দিলে বিশেষ ক্লাসের বেতন দেওয়া লাগবে না। সেই অনুযায়ী আমি বিশেষ ক্লাস করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমি ক্লাসের থার্ড গার্ল হয়ে পরীক্ষায় কেন ফেল করবো। বিশেষ ক্লাসের বেতনের জন্য টেস্ট পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে আমাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করা হয়েছে।

তবে নিতু দাবি করেন, সে অতীতে শুধু গণিতে ফেল করেছিল। কারণ গণিতের জন্য আলাদা শিক্ষক রাখার মত টাকা তার নেই। এবার ৩ বিষয়ে ফেল করার কথা জানার পর সে পরীক্ষার খাতা পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানিয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু বিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ তাকে সাফ না করে দেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সহকারি প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার বলেন, সেদিন একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এর বেশি কিছু নয়।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের একটি সূত্র বলেন, সহকারি প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তারের ব্যবহার খুবই রূঢ়। নিতুর সঙ্গে পরীক্ষা চলাকালীন এমনটা না করলেও পারতেন। মেয়েটির বাবা গরিব। তাই জানুয়ারি মাসেই বিশেষ ক্লাসের বেতন দিতে হবে না বলে নিতুকে জানিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ।

সূত্র আরও বলেন, সমস্যা হলো শিক্ষিকা লায়লা প্রভাবশালী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের পছন্দের। তাই তার বিষয়ে কিছু করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আজিজুল হক বলেন, নিতুর কাছ থেকে লিখিত পেয়ে বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে ফোনে ওই শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছি। ওই শিক্ষক ঘটনা সরাসরি অস্বীকার না করে ঘুরিয়ে উত্তর দিয়েছেন। তাই ঘটনা তদন্তে ১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০২২
এমআরপি/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।