ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

২৫ বছরে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২২
২৫ বছরে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি

খাগড়াছড়ি: আজ ২ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি। প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

চুক্তির ২৫ বছরেও বহু ধারা-উপধারা আজও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে বলে দাবি করছেন পাহাড়ি নেতা ও সাধারণ পাহাড়িরা। এসবের মধ্যে ভূমি বিরোধই বড় সংকট। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকি ধারাগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

অধিকার প্রশ্নে প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে সশস্ত্র সংগ্রাম। এতে অসংখ্য পাহাড়ি ও বাঙালি ক্ষতির শিকার হন। পাহাড়ের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শান্তি প্রক্রিয়া পিছিয়ে পড়ে।

সবশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতির সঙ্গে তৎকালীন সরকারের পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে। অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন প্রায় দুই হাজার শান্তিবাহিনী সদস্য। কিন্তু চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এত বছরেও প্রত্যাশিত শান্তির দেখা মেলেনি বলে মনে করেন সাধারণ পাহাড়িরা।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে। অন্যদিকে চুক্তির সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশ পাহাড়ি নেতা ও সাধারণ পাহাড়িরা। চুক্তির সব ধারা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভূমি বিরোধসহ সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে বলে অভিমত তাদের।

চুক্তিবিরোধী পাহাড়ি সংগঠন ‘ইউপিডিএফ’ নেতারা মনে করেন, চুক্তির ২৫ বছর কেটে গেলেও পাহাড়ে শান্তি আসেনি। সেই চুক্তির মাধ্যমে আগামীতেও শান্তি আসবে না।

ষাট-এর দশকে জল বিদ্যুতের জন্য কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাহাড়ে বাঙালি পুনর্বাসনসহ সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণে পাহাড়ে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই সংগ্রাম চলে প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে। পরে স্বাক্ষরিত হয় চুক্তি।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-প্রসীত গ্রুপ) মুখপাত্র অংগ্য মারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর কেটে গেলেও এখনও পাহাড়ে শান্তি আসেনি। বিপুল সংখ্যক সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি, প্রতিনিয়ত ভূমি-দখলসহ ভয়ভীতির মধ্য দিয়ে পাহাড়িরা দিন কাটাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ২৫ বছরে অন্তত ১৯টি বড় সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো প্রমাণ করে যে, পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী সরকার ও জেএসএস উভয় পাহাড়িদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান বলেন, দেশের একই সংবিধানে নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। পাহাড়ে সুযোগ সুবিধায় বাঙালিরা বঞ্চিত। ভূমি ব্যবস্থাপনায় প্রথাগত রীতি অনুসরণের বিধান যুক্ত করায় সেখানে বসবাসরত বাঙালিরা ভূমিহীন ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছে।

তিনি চুক্তিতে বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধনপূর্বক পূনঃমূল্যায়নের দাবি জানান। একইসঙ্গে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমার অপসারণ, পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যাহার করা নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্পগুলো পুনরায় স্থাপনের দাবি জানান।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি দেখলে সহজে অনুমান করা যায় যে চুক্তির ফলে কী কী পরিবর্তন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা আছে বলে চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সব মহল যদি সহযোগীতা করে, তাহলে দ্রুত সময়ে চুক্তির অন্যান্য ধারাও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, কিছু সমস্যা থাকলেও চুক্তির অধিকাংশ বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়েছে। সবার আন্তরিকতা থাকলে বাকি ধারাগুলো শিগগির বাস্তবায়িত হবে।

এদিকে চুক্তির বর্ষপূর্তিতে খাগড়াছড়িতে ২ ডিসেম্বর শোভাযাত্রাসহ দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদ, সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি ও গুইমারা রিজিয়ন। জনসংহতি সমিতিও পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২২
এডি/এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।