ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

কখনোই কি ফিরবে তাসনুভার সেই ঈদ? 

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২১
কখনোই কি ফিরবে তাসনুভার সেই ঈদ?  তাসনুভা

রূপান্তরিত নারী (ট্রান্সজেন্ডার) তাসনুভা আনান শিশির সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ট্রান্সজেন্ডার সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন তাসনুভা।

 

শিক্ষায়, সামাজিক পরিচয়ে নিজেকে অনেকটা এগিয়ে নিলেও সমাজের চাপমুক্ত হতে পারেননি এখনো তাসনুভা। সেই সঙ্গে পরিবারও এখনো দূরেই রয়ে গেছে। ছোটবেলা থেকে একা থেকে থেকেই অভ্যস্ত তিনি। তারপরও মন কাঁদে ঈদ এলে। বারবার মনে হয় মায়ের কথা, বাড়ির সামনের ছোট নদী তার লাগানো গাছ....ভাবতে ভাবতে তাসনুভার চোখ ভিজে ওঠে, কপোল বেয়ে দু’ফোটা চোখের জল পড়ে যেন ভোরের শিশির হয়ে।  

কত কী যে উঠে আসে তাসনুভার ভাবনায়, তিনি বলে চলেন...বারান্দার গাছগুলোকে যত্ন করার সময় ওদের দিকে তাকালেই আমার চোখ ভিজে যায়।  বার বার করে বাড়ির সামনের নিজের হাতে লাগানো গাছগুলোর কথা মনে পড়ে। গন্ধরাজ, বেলি, গাদাসহ নানা রঙের বনফুল ফুটে উঠোনটা ভরে উঠতো। কী সুন্দর!  কী সুন্দর, সেই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য।

ঠিক যেন ছোট বেলার দিনগুলোতে চলে গেছেন তাসনুভা, নিজের মনেই বলতে থাকেন, আচ্ছা, আমার সেই লম্বা লম্বা বাইন গাছগুলো ভালো আছে তো? আমি  গাছেই থাকতাম সারাদিন। স্কুল শেষ করেই একটু  খেয়েই উঠতাম গাছে, সেখানে বসেই হোমওয়ার্ক করতাম, কবিতা লিখতাম, পাশের খালের জোয়ার ভাটা দেখতাম। বাইরে বের হলেই লোকের ইভ টিজিং, বুলিং আমায় খুব কষ্ট দিত, সেই ভয়েই কেমন যেন ওই গাছগুলোই আমার একমাত্র বন্ধু হয়ে গিয়েছিল।  
মনে পড়ে, ছোট বেলায় বাড়ির সামনের কাঁচা রাস্তা পার হলেই ধান ক্ষেতের আইল ধরে হেঁটে যেতাম অনেক দূর।  

বড় হতে হতেই অবস্থা একটু একটু করে পালটানো শুরু হয়। সন্ধ্যা হলে মা আগে খুঁজতেন এ পাড়া সে পাড়া, এবাড়ি-ওবাড়ি। আচ্ছা, মা এখন কেমন আছে? যদিও ফোনের কথায় মায়ের গলার কণ্ঠের অনেক পরিবর্তন বুঝতে পারি।  ভিডিও কলে হয়তো কাঁচাপাকা চুলগুলো দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু সেই চুলের একটা চেনা ঘ্রাণ আছে, আমার নাকে লেগে থাকে, কোথাও পাই না সেই ঘ্রাণ।

মায়ের শরীরে একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ আমার নাকে আজও পাই আমি। প্রতিবছর ঈদ আসে, ঈদ এলেই মনটা যেন ছোটবেলার মায়ের সঙ্গে কাটানো ঈদগুলোতে ফিরে যেতে মন চায়। এখনো মনে আছে, সকালবেলা মা ডেকে তুলতেন, মায়ের হাতে স্পেশাল শরবত যেটাকে আমরা মলিদা বলি। আদা,নারিকেল,মুড়ি চালের গুঁড়ার মিশ্রণে এক অদ্ভুত মজার রেসিপি।  ইউটিউবের কল্যাণে কয়েকবার করেছিলাম,কিন্তু মায়ের হাতের সেই স্বাদ কই পাই? ঈদ আসে-ঈদ যায়, সাধারণ দিনের মতোই, আমার আর নতুন স্মৃতি জমা হয় না।  

নাই, নাই কিচ্ছু নাই... 

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২১
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।