ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

পাবনার ‘মুড়ি গ্রাম’

শাহীন রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১০
পাবনার ‘মুড়ি গ্রাম’

পাবনা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের অন্যতম পেশা মুড়ি উৎপাদন। বাজারের ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ির চেয়ে এই গ্রামগুলোর লবণ পানির তৈরি মুড়ি খুব সুস্বাদু ও ব্যাপক সমাদৃত।

এ কারণে এই গ্রামগুলো মানুষের কাছে ‘মুড়ি গ্রাম’ নামে পরিচিত। বর্তমানে এই গ্রামগুলোর মুড়ি পাবনা, ঢাকা, নাটোর, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের মাহমুদপুর, নতুনপাড়া, ঝবঝবিয়া, শ্যামপুর, বিলকুলা, গুপিনাথপুর, গুপিনপুর, ভবানীপুর, রাঘবপুর গ্রামের উৎপাদিত লবণ পানির মুড়ি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ওই এলাকাগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেক বাড়িতে মুড়ি উৎপাদনের ধুম পড়ে গেছে। বাড়িগুলোতে নারী-পুরুষ-বৃদ্ধসহ সবাই মুড়ি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।

মুড়ি উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী মোহাম্মদ আলী, ওম্বর আলী, মোজাম উদ্দিন, আবদুল মতিন, হায়দার আলী, উজির আলী, নাজের উদ্দিন, রাজেক, মান্নান, আবু সামা, ফকির, কামাল, রহিম শেখসহ অনেকের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, সারা বছর এই গ্রামগুলোতে মুড়ি উৎপাদন করা হয়। তবে রমজান মাস এলেই মুড়ি উৎপাদনের চাপ বেড়ে যায় অনেক গুণ। তারা বলেন, মুড়ি উৎপাদনের জন্যে যা যা প্রয়োজন সবই দাম বেড়ে গেছে। বর্তমানে আমরা বাজারে ৫০ টাকা কেজিতে ১১ ধান ও ২৯ ধানের মুড়ি বিক্রি করছি পাইকারি দরে। আর আমন আউশের মুড়ি ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।

মুড়ি উৎপাদনকারী নারী হাসিনা খাতুন বলেন, মুড়ি তৈরি করতে অন্তত দুজন দরকার হয়। তিনি বলেন, ধান কেনা, সেদ্ধ করা, শুকানো, ভাঙানো ও পরিষ্কারের পর মুড়ি ভাজতে হয়। তিনি বলেন, আমরা লবণ পানি আর বালি দিয়ে মুড়ি ভাজি। বাজারে যে লম্বা ও সাদা মুড়ি পাওয়া যায় তা ইউরিয়া সার দিয়ে তৈরি হয়।
 
আবদুস সুবহান বলেন, নিজের বাড়িতে তৈরি ৪০ কেজির পাশাপাশি প্রতিদিন তাকে বাজারে দিতে হয় ১৬০ কেজি। তিনি বলেন, বাজারে মুড়ির ঝালি মাপের অজুহাতে স্থানীয়দের বখরা দিতে হয় ৮ টাকা। খাজনা ৭ টাকা। গাড়িভাড়া প্রতি ঝালি ৩০ টাকা। মুড়ি তৈরির জন্য খোলা ধরতে একজন নারীশ্রমিককে দিতে হয় ৩০ টাকা আর দু বেলা খেতে দিতেও হয়। ধান ভাঙাতে মিল মালিককে দিতে হয় প্রতি মণে ২০ টাকা। এক কেজি ধানের দাম পড়ে ২১ টাকা। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে প্রতি কেজি মুড়িতে ৫ টাকা মুনাফা হয়।

শরিফা খাতুন বলেন, ভোরে ফজরের আজানের সাথে সাথে খোলায় বসতে হয়। আর মাগরিবের আগে খোলা থেকে উঠতে হয়। অবস্থা নাকাল হলেও পেটের তাগিদে কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, এই বাড়িতে বিয়ের পর থেকে এসে দেখছি মুড়ি উৎপাদন। সংসারের অন্য লোকদের কাছ থেকে শুনেছি পূর্বপুরুষের সময় থেকে এসব এলাকায় মুড়ি উৎপাদন করা হয়। শুনেছি, বাংলাদেশের মধ্যে এই অঞ্চল মুড়ি উৎপাদনের জন্য নাকি বিখ্যাত। তবে তার কাছে মুড়ি তৈরির সময়ে খোলা ধরাটা দোজখের আগুনের মতো মনে হয়।

বেপারি সোবাহান মিয়া বলেন, এলাকায় ২০০ মণ ধান বিভিন্ন মানুষের কাছে মুড়ি উৎপাদনের জন্য দিয়েছি। তাদের কাছ থেকে উৎপাদিত মুড়ি ২ টাকা লাভ দিয়ে কিনে নিই। পরে ওই মুড়ি বাজারজাত করি।

মুড়ি উৎপাদনের জন্যেই মাহমুদপুর এলাকায় তিনটি বৈদ্যুতিক চালিত ধান মাড়াইকল স্থাপিত হয়েছে। মিলের মালিক কোবাদ আলী বিশ্বাস বলেন, বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছি। ২৪ ঘণ্টায় ৭০০ থেকে ৮০০ মণ ধান ভাঙাতে পারি। কিন্তু বারবার বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে কোনও কাজ করতে পারছি না। ফলে মুড়ি উৎপাদনের মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, সাধারণ মানুষ কেন যে বোঝে না, সাদা ও বড় হলেও ইউরিয়া পানিমিশ্রিত মুড়ি মানবদেহের জন্যে তিকর। অথচ লবণ পানিমিশ্রিত মুড়ি মানবদেহের জন্য উপকারি। তারা বলেন, তিকর পণ্য পরিহার করে সাধারণ মানুষের উচিত মানবদেহের উপকারি পণ্য ক্রয় করা বা খাওয়া।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০২০, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।