ঢাকা, বুধবার, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

করোনার ছুটিতে নীরবেই অনলাইনে দেশি পণ্যের  অগ্রযাত্রা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
করোনার ছুটিতে নীরবেই অনলাইনে দেশি পণ্যের  অগ্রযাত্রা  নারী উদ্যোক্তা

করোনার কারণে ২৬ মার্চ থেকে দেশে অফিস, কারখানা সব কিছুতে ছুটি শুরু হয়। এক মাস হয়ে গেছে এবং এই এক মাসে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতোই বাংলাদেশেও বেড়েই চলেছে। 

এবার বাঙালির বড় উৎসব পহেলা বৈশাখে আমরা কোনো আয়োজন করতে পারিনি, রোজার মধ্যেও নেই ইফতার বাজার।  ঈদের আনন্দও বাইরে গিয়ে করা যাবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না।

এমন অচলাবস্থা কখনোই ছিল কিনা জানা নেই আমাদের। তবে এর মধ্যেও অনেকটা নীরবেই উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) এর হাত ধরে অনলাইনে দেশি পণ্যের প্রসার হচ্ছে।
 
আমাদের দেশে অনেকেই বিশেষ করে বড় বড় শহরগুলোতে লাইফস্টাইল প্রডাক্ট বলতে মূলত বিদেশি ইম্পোর্টেড ব্র্যান্ডের প্রডাক্টকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। দেশি পণ্যের প্রতি এক ধরনের অবহেলা রয়েছে তা বলা যায়। ভারত আর পাকিস্তানের পোশাক (শাড়ি, থ্রিপিস, লন, লেহেঙ্গা ইত্যাদি), কসমেটিক্স মানে ইউরোপ-আমেরিকা বা অন্তত থাইল্যান্ড, কোরিয়া আর চায়না এসবকে বুঝি আমরা। ঢাকা, চট্টগ্রামে চাইনিজ, থাই আর ফাস্ট ফুডের দাপটে মান সম্মত দেশি খাবারের হোটেল পাওয়া কঠিন।  

নারী উদ্যোক্তাঅনলাইনে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ। ফেসবুকজুড়ে বিদেশি প্রডাক্ট নিয়ে লাইভ করছেন অনেক দেশি উদ্যোক্তা এবং তাদের বড় অংশ নারী। আছে অনেক পেইজ এবং গ্রুপ যেখানে সব ধরনের বিদেশি পণ্য পাওয়া যায় কিনতে। সেই তুলনায় অনলাইনে দেশি পণ্য পেতে এতদিন বেশ কষ্ট হচ্ছিল। এই অবস্থা বদলে দিয়েছে উই প্লাটফর্মে থাকা শত শত নারী উদ্যোক্তা যারা দেশি পণ্য বিক্রি করেন ওয়েবসাইটে আর ফেইসবুক পেইজে।  

আমাদের অনেকের মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো বাংলাদেশে তেমন বেশি ধরনের পণ্য উৎপাদিত হয় না। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করাই একমাত্র সমাধান। কিন্তু এদেশের ৬৪ জেলাতে যে কত ধরনের পণ্য তৈরি হয় আমরা তার খোঁজ রাখি না।  

রংপুরের বাটনা দিয়ে ব্লেন্ডারের থেকে অনেক ভালো করে ভর্তা তৈরি করা যায়। রংপুরের শতরঞ্জির বিদেশি কার্পেটের তুলনায় দামে যেমন সস্তা তেমনি স্বাস্থ্যকর (ধুলা জমে না তেমন) আর সহজে পরিষ্কার করা যায়। শেরপুর জেলার তুলশীমালা চাল সব দিক থেকেই বাসমতী চালের থেকে এগিয়ে।  
যেকোনো প্লেটের তুলনায় কাসার প্লেটে খাওয়া স্বাস্থ্যকর, দার্জিলিং, শ্রীলংকা আর চীনের চায়ের তুলনায় সিলেট বিভাগের চা কোনো অংশে কম নয়। উই গ্রুপের দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির নারী (এবং কিছু পুরুষ) উদ্যোক্তারা এই কথা গুলোই শুধু প্রতিদিন বলছে তা নয় বরং এগুলো কেনাবেচা করছে।  

উই গ্রুপে ৭৭ হাজার এর বেশি মেম্বার রয়েছেন যাদের প্রায় সবাই খুব অ্যাক্টিভ। জামদানি নিয়ে তারা বেশ ভালো কাজ করেছে এবং নকশি কাথা নিয়েও। চলছে দেশি পণ্যের ই-কমার্স এর সিলেবাস তৈরির কাজ। সারা দেশের সব জায়গার সব পণ্য পরিচিত করানোর বা কন্টেন্ট তৈরির স্বপ্নও রয়েছে।
 
উই এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আড়াই বছর ধরে এই সংগঠনটির হাল ধরে একে শুন্য থেকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি (রাজিব আহমেদ) উই গ্রুপের হাল ধরেছি ১৮ অগাস্ট এবং ৮ মাসে খুব বড় ধরনের পরিবর্তন দেখলাম নিজের চোখেই।  

করোনায় হয়ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে কিন্তু তার মধ্যেও অনলাইনে শত শত মানুষ দিন রাত দেশি পণ্য নিয়ে কথা বলছে, ছবি দিচ্ছে, অর্ডার দিচ্ছে এবং দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির ভিত তৈরি করছে যার সুফল আমরা বছরের পর বছর পাবো।

রাজিব আহমেদ

 

রাজিব আহমেদ
ই-ক্যাব’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি

 

 

 

 

 

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২০
এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।