ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

কী ‘মধু’ আছে সিগারেটে?

রবার রসাঁ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১১
কী ‘মধু’ আছে সিগারেটে?

গভীর রাতে বাসায় ফেরার পথে মহল্লার গলির মাথায় শুনতে পেলাম দুই দোকানদারের গল্প -- বাজারে সিগারেট সঙ্কট, সিগারেটের দাম বাড়তি ইত্যাদি। এরই মাঝে অন্য একজন মন্তব্য করলেন, ‘সিগারেটের দাম যতই বাড়–ক না ক্যান মাইনষে সিগারেট খাইবোই!’

কেন খাবে সিগারেট? কী ‘মধু’ আছে সিগারেটে?

ধূমপায়ী মাত্রই জানেন ‘ধূমপানে বিষপান’।

সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকছে ‘ধূমপান ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ’, ‘ধূমপানে স্ট্রোক হয়’, ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ ইত্যাদি। তবুও তৃতীয় বিশ্বে আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলছে ধূমপায়ীদের সংখ্যা!

জেনে নিন কী আছে সিগারেটে?

চিকিৎসকদের গবেষণা বলে, সিগারেটে থাকে চার হাজারেরও বেশি ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ। এতে আছে আর্সেনিক। আরো আছে এমন রাসায়নিক পদার্থ যা পাওয়া যায় গ্যাসোলিনে। আরো আছে ব্যারিলিয়াম নামের বিষাক্ত ধাতবকণা। আছে বিষাক্ত ক্যাডমিয়াম, যা ব্যবহার করা হয় ব্যাটারিতে। সিগারেটে রয়েছে নিকেলের অস্থিত্ব।

কাঠে বার্ণিশ করতে যেসব উপাদানের প্রয়োজন হয় এমন একটি উপাদান থাকে সিগারেটে। জেনে হয়ত অবাক হবেন, সিগারেটে এমন রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা ব্যবহার করা হয় ইঁদুর মারার বিষ তৈরিতে।

রূপকথায় রয়েছে দেবতাদের আর্শীবাদে জন্ম হয়েছে তামাক গাছের। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই গাছটির কোন ভেষজ-গুণ আজো আবিস্কৃত হয়নি। গবেষণায় পাওয়া গেছে শুধু এর ক্ষতিকারক দিকগুলো।

তাই ধূমপানে একজন মানুষের উপকারি দিক তো নেই অথচ রয়েছে অন্তহীন ক্ষতিকারক দিক। এক কথায় বললে, এটি মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেই ক্ষতি সাধন করে থাকে। বহুকাল থেকেই এটি সন্দেহাতীতভাবে পরীক্ষিত যে ধূমপান ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ।

মনে রাখবেন ফুসফুস, মূত্রনালী, যকৃত, মুখ, গলা, পরিপাকতন্ত্রসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে আঘাত করেই আপনি তথাকথিত সুখটান দেন সিগারেটে।

আপনার এই সুখটান শুধু নিজেরই ক্ষতি করছে না, ক্ষতি করে চলছে আশে-পাশের অধূমপায়ীদেরও। খুবই সতর্ক থাকতে হবে আপনার পাশের বা ঘরের শিশু ও সন্তান-সম্ভবা নারীর প্রতি। কোমল প্রাণের এই মানুষগুলো যেন কোনভাবেই আপনার ধূমপানের শিকার না হোন।

কী কী সুবিধা সিগারেট ছাড়লে?

সিগারেট ছাড়লে তাৎক্ষনিত যেসব সুবিধা পাবেন তা হলো, ধূমপানের ফলে অস্বাভাবিক রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সতেজ হয়ে উঠবে আপনার হৃদযন্ত্র। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কমে যাবে রক্তে জমা কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ।

কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে রক্তচাপ। কেটে যাবে খুশখুশি কাশ। কয়েক মাসের মধ্যে শরীরটা ফিরে পাবে তার স্বাভাবিক চলার গতি।

আর সুদূর প্রসরী উপকারিতা সম্পর্কে চিকিৎসকগণ বলেন, ধূমপান ছেড়ে দিলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় ব্যপকহারে। কমে যায় হার্ট ও লাঙ্কের বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা। ফিরে পাবেন শরীরের স্বাভাবিক লাবণ্যতা। বেঁচে যাবেন ধূমপানজনিত রোগের কারণে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে।

কেমন করে ছাড়বেন সিগারেট?

ধূমপান ছাড়ার কৌশল নিয়ে কত কথাই না প্রচলিত আছে দেশে-দেশে। সিগারেট ছাড়তে কত রকমই না ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেমন আছে ধোঁয়াহীন ইলেক্ট্রনিক সিগারেট! আপনার ধূমপান ছাড়তে পরামর্শ নিতে পারেন চিকিৎসকের। এ বিষয়ে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারেন আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন অথবা কোন প্রিয়জন।

তবে মনে রাখবেন সেই আপ্তবাণী, ‘ধূমপান ছাড়তে আপনার নিজের ইচ্ছাটাই যথেষ্ঠ। ’

শেষ কথা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লুএইচও) হিসাবে সারা পৃথিবীতে ধূমপান করেন একশ তিরিশ কোটিরও বেশি মানুষ। এদের মধ্যে প্রতি সাড়ে ছয় সেকেন্ডে মারা যান একজন করে। এই লাশের মিছিলে দেখতে চাই না কোন প্রিয়জনের মুখ।

বাংলাদেশ সময় ১০২০ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।