ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

সগিরা মোর্শেদ হত্যা: সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ১০ আগস্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
সগিরা মোর্শেদ হত্যা: সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ১০ আগস্ট

ঢাকা: ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।

রোববার (৩১ জুলাই) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক রফিকুল ইসলামের আদালতে এই মামলার নবম সাক্ষী নিহত সগিরা মোর্শেদের মেয়ে সাদিয়া চৌধুরীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল।

এ দিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, সাদিয়ার বয়স কম থাকায় তার সাক্ষ্যগ্রহণ না করতে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তাই সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর আবেদন করেন তারা। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ১০ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ২৩ জুন সাদিয়া সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হন। তবে তার সাক্ষ্যগ্রহণের বিরুদ্ধে আপত্তি জানায় আসামিপক্ষ। তারা বলেন, ঘটনার সময় সাদিয়ার বয়স ছিল ৬ বছর। তাই ৩৩ বছর আগে ৬ বছর বয়সী এক শিশুর সাক্ষ্য ঘটনা প্রমাণে কোনো গুরুত্ব বহন করবে না। আমরা এই সাক্ষীর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপত্তি দেব। তাই সেদিন তার আংশিক জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত রাখেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং ওই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন—সগিরা মোর্শেদের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী, জা সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহিন, শ্যালক আনাছ মাহমুদ রেজওয়ান, মারুফ রেজা ও মন্টু মন্ডল ওরফে কুঞ্জ চন্দ্র মন্ডল।

সবশেষ গত ৭ জুন এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী নিহতের ভাই ডা. গওস আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ১২ জুন তাকে জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মোর্শেদ সালাম মারা যান।

ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদ সালামের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দুজনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেওয়া হয় সাতজনের। সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তকালে আসামি মন্টু এবং তৎকালীন (১৯৮৯) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেপ্তার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

পরের বছর ২৭ আগস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তোলা হলে ২০১৯ সালে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ক‌রে নেন।

এই ঘটনার ৩০ বছর পর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চারজনের বিরু‌দ্ধে ২০২০ সালের ১৪ জানুয়া‌রি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এক হাজার ৩০৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এরপর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
কেআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।