ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

কুষ্টিয়ায় ৩ খুন: ৩ জনের আমৃত্যু জেল, ৮ জনের যাবজ্জীবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২২
কুষ্টিয়ায় ৩ খুন: ৩ জনের আমৃত্যু জেল, ৮ জনের যাবজ্জীবন

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার চাঞ্চল্যকর দেহ থেকে মাথা কেটে তিনজনকে হত্যার মামলায় তিন আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।  

মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক তাজুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে আসামিদের অনুপস্থিতিতে এ রায় দেন।

আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সদর উপজেলার পুলতাডাঙ্গা গ্রামে আসকর সরদারের ছেলে ফারুক সরদার, পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের ইছাহক আলী মাস্টারের ছেলে কালু ওরফে আলী রেজা ও কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়া পাড়ার ২ নম্বর মসজিদ গলি এলাকার কালো মজনুর ছেলে রোহান।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- ভেড়ামারা বাহাদুরপুর গ্রামের ফারুক মণ্ডল, ঝিনাইদহের ভায়না গ্রামের আলতাফ মেম্বর, জলিল সেখের ছেলে লিয়াকত হোসনে, মনোয়ার হোসেন, মৃত: আনছার সেখের ছেলে আকাউদ্দিন, করিমপুর গ্রামের জহির উদ্দিন জোয়ার্দার, খোর্দ বাখইল গ্রামের নরুল এবং মাছপাড়া গ্রামের খাকচার মণ্ডল।

আদালতের মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৯ আগস্ট রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সোনাইডাঙ্গী গ্রামের মাঠে বংশীতলা গ্রামের শামসুল আলম জোহা (৪৫), ভবানীপুর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে কাইয়ুম শাখাওয়াতী (৫৫) ও আয়ুব আলী নামে তিনজনের মাথাবিহীন দেহ পাওয়া যায়। এর প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া শহরের সড়ক ভবন ও গণপূর্ত ভবনের গেটে তাদের মাথা ঝুলন্ত  অবস্থায় পাওয়া যায়। ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার জিম্মি করতে জাসদ গণবাহিনী এ হত্যাকাণ্ড চালায়।

এ ঘটনায় নিহত শাসসুল আলম জোহার স্ত্রী মমতাজ খাতুন বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখসহ আরও চার/পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। এছাড়া নিহত কাইয়ুম শাখাওয়াতীর ছোট ভাই আব্দুল হাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলা দু’টি তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর মোট ২২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন ইবি থানার সেই সময়ের উপ-পরিদর্শক গোকুল চন্দ্র অধিকারী।

চার্জশিটে তিনি উল্লেখ করেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার জিম্মি করার উদ্দেশে চাঞ্চল্যকর ও মর্মান্তিক এ ট্রিপল মার্ডার করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী জানান, দীর্ঘ শুনানি শেষে ১১ আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আদালত তাদের এ সাজা দেন। অপরাধের মাত্রা ভেদে তিনজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং আটজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর করে জেল দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় চার্জশিটভুক্ত অপর ১১ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

এ রায় ঘোষণার সময় আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, আসামিরা জাসদ গণবাহিনীর নেতাকর্মী। আন্তঃজেলা অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্র তারা। অভ্যাসগত অপরাধী হওয়ায় তারা হত্যাকাণ্ডের পর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ঝুলিয়ে রাখার মতো নৃশংস কঠিন পন্থা অবলম্বন করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন।  

রায় ঘোষণার সময় সব আসামি পলাতক থাকা প্রসঙ্গে পিপি বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন এবং কেউ কেউ এখনও বেঁচে থাকলেও পলাতক।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।