ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

বিপজ্জনক বায়ু থেকে রক্ষায় এলার্ট সিস্টেম চালুর নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
বিপজ্জনক বায়ু থেকে রক্ষায় এলার্ট সিস্টেম চালুর নির্দেশ

ঢাকা: বায়ুদূষণের প্রধান উৎসসমূহ চিহ্নিতকরণ ও তা হ্রাসের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক বায়ু থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় এলার্ট সিস্টেম প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে পোড়ানো ইটের বিকল্প কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রতিবেদন আদেশ পাওয়ার ৪ মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট  বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

রুলে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হওয়ায় কেন বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও জনস্বার্থ পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না এবং একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুর মান উন্নয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা রিটের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

বেলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২২ সালের শুরু থেকেই বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা প্রায়ই উঠে আসছিল বিশ্বের শীর্ষে। শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে অনুযায়ী বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস এবং ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। বায়ুর মান বা একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং তা স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়।

এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি থাকা মানে ওই স্থানের বায়ু ‘বিপজ্জনক’, যা সবার জন্য ক্ষতিকর।  ডিসেম্বর, ২০২১ এবং জানুয়ারি ২০২২-এ ২-২৩ ঘণ্টা বায়ুর মান ৩০০ থেকে ৪৪৯-এ ছিল। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল অনুযায়ী, জানুয়ারিতে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে ছিল আট দিন। জানুয়ারি, ২০২২-এ ২০ দিনের মধ্যে ১১ দিনই ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ছিল।

এমন পরিস্থিতিতেও কোনোরকম স্বাস্থ্য সতর্কতা ছাড়াই নগরবাসী স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং দূষিত বায়ুই সেবন করছে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস)-এর তথ্যমতে, বিগত ৬ বছরে সর্বমোট ৩৮ দিন বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া গেছে যার অর্থ বছরে ৭ দিনেরও কম বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করতে পারছে এ নগরবাসী। বায়ুদূষণ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে থাকলেও, এ দেশে কখনও জারি হয়নি কোনোরূপ স্বাস্থ্য সতর্কতা। তার ফলে প্রতিবছর বায়ুদূষণজনিত রোগে প্রায় ১.৫৩ লক্ষের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে।

বেলার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং রাষ্টপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

বিবাদীরা হলেন—মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; স্থানীয় সরকার বিভাগ; স্থানীয় সরকার; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; শিল্প মন্ত্রণালয়; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, অর্থ বিভাগের সচিব; ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ১৫ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২২
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।