ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

আদালত বন্ধ থাকায় বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ

খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২১
আদালত বন্ধ থাকায় বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ

ঢাকা: সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আব্দুল হালিম খান। এর মধ্যেই প্রেমঘটিত কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পড়ে গত প্রায় চার মাস ধরে জেলহাজতে আছেন।

গত ১৪ মার্চ হাইকোর্টে তার পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়েছে। এরপর প্রায় দুই সপ্তাহের অবকাশ শেষে ৩১ মার্চ হাইকোর্ট খোলার পর তার আইনজীবী জামিন আবেদন শুনানির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময়েই লকডাউনে প্রায় বন্ধ উচ্চ আদালতের কাজ। এখন আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার অপেক্ষা। কবে জামিন পাবেন এ তরুণ, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তার পরিবার।

আব্দুল হালিম খানের ভাই দুলাল মিয়া জানান, চেষ্টা করেছিলাম, নিম্ন আদালত থেকে জামিনে ভাই মুক্তি পাবে। তবে গত ৪ মার্চ ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ শওকত আলী চৌধুরী তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এতে গত ১৯ মার্চ ৪১তম বিসিসিএস এর প্রিলিমনারি পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হন আব্দুল হালিম। এরপর আশা করেছিলেন, উচ্চ আদালত থেকে ভাইকে জামিনে মুক্ত করতে পারবেন তারা। তবে লকডাউনের কারণে সেই আশাতেও গুড়েবালি। এখন বৃদ্ধ বাবাকে আর সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা তারা খুঁজে পাচ্ছেন না।

ভোলার তরুণী লাইজু আক্তার থাকতেন যাত্রাবাড়ীতে। স্বামী রুবেল মিয়াকে নিয়ে এক সন্তানের সংসার ছিল তাদের। তবে হঠাৎ করেই স্বামীর সংসারে অশান্তির কারণে নির্যাতিত হতে হয় তাকে। এ ঘটনায় গত বছর নভেম্বর মাসে যাত্রাবাড়ী থানায় যৌতুকের জন্য মারধরের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। সেই মামলা চলাকালে আপোসের শর্তে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে যায়। আগামী ১৫ এপ্রিল দেনমোহরের টাকা দেওয়ার শর্তে সেই মামলা প্রত্যাহারের কথা রয়েছে লাইজু আক্তারের। তবে আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার সেই টাকা পাওয়া নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

লাইজু আক্তার জানান, শুধু দেনমোহরের টাকা নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্যই বিগত তিন মাস ধরে তাকে ঢাকায় অবস্থান করতে হচ্ছে। ভেবেছিলেন, ১৫ এপ্রিল টাকা নিয়ে গ্রামের বাড়ি ভোলায় ফিরে যাবেন। তবে লকডাউনে আদালত বন্ধের মেয়াদ বেড়ে গেলে তার সেই আশা শেষ পর্যন্ত দুরাশায় পরিণত হতে পারে। এটা ভেবে তিনি এখন কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাকিলুজ্জামান গত ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে আটক হন। এরপর তাকে মতিঝিল থানার একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এজাহারে নাম না থাকার পরও দু’দিনের রিমান্ড শেষে তিনি এখন কারাগারে। তবে আদালত বন্ধ থাকায় তার পক্ষে আইনজীবী জামিন আবেদন চাইতে পারছেন না। তাই শাকিলের পরিবার তাকে নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।

জমিজমা নিয়ে সাত বছর ধরে উচ্চ আদালতে মামলা চালাচ্ছেন খুলনার শওকত হোসেন। সাত বছর চেষ্টা করে মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের তালিকায় আনেন। এরই মধ্যে মামলার শুনানিও শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনিও হতাশ হয়ে পড়েছেন। লকডাউনের পরে কখন হাইকোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়, সেই সময় সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ স্বএখতিয়ারে থাকে কিনা, তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন এখন সত্তরোর্ধ্ব এ সাবেক পুলিশ উপ-পরিদর্শক।

গত ৫ এপ্রিল থেকে আদালত প্রায় বন্ধই রয়েছে। জরুরি কাজের জন্য সুপ্রিম কোর্টের চারটি (ফৌজদারি, দেওয়ানি, রিট ও কোম্পানি একটি করে) বেঞ্চ সচল রয়েছে। নিম্ন আদালতে এ কার্যক্রম অন্য সব ছুটির মতোই। শুধু চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতার কারণে একটি এবং ক্ষেত্র বিশেষে দু’টি করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কিছুক্ষণের জন্য বসেন। বাকি সব দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। ছুটির এ তিনদিনে ঢাকার আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমন আরও অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথাই জানা গেছে।  

এ অবস্থায় রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে বিচার প্রার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এসব বিচার প্রার্থী এখন ভেবে পাচ্ছেন না কি করবেন! তাদের এখন শুধু প্রশ্ন, আদালত খুলবে তো! ঈদের আগে তারা কাঙ্ক্ষিত সমস্যার সমাধান পাবেন তো!

ঢাকা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ তাকিয়ে আছেন সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকে। জানতে চাইলে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হোসনী মোবারক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গত ৪ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি ও আইন মন্ত্রণালয় বরাবর কিছু সুপারিশমালা দিয়েছিলাম। সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। এখন আগামী সোমবার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আবার সভা হবে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন মনে করেন, আইনজীবীদের কোভিড থেকে সুরক্ষা যেমন প্রয়োজন, তেমনি বিচারপ্রার্থীদের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।  

আব্দুল বাতেন বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্তত জামিন, ফাইলিং ও নিষেধাজ্ঞার শুনানি চালু রাখা উচিত। আমরা আদালত অঙ্গনে আইনজীবীদের সুরক্ষার বিষয় নিয়ে বুধবার সভা করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি, ১১ তারিখের পর লকডাউন কিছুটা শিথিল হবে। সেই সঙ্গে আদালতেও সব ধরনের জামিন শুনানি, সব ধরনের ফাইলিং ও নিষেধাজ্ঞার মতো জরুরি বিষয় শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি উদ্যোগ নেবেন। আমরা ১১ তারিখের মধ্যে লকডাউনের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে আবার দাবি আকারে উপস্থাপন করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২১
কেআই/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।