ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

আত্মরক্ষার অধিকার

ল’ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
আত্মরক্ষার অধিকার ছবি: প্রতীকী

আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রত্যেকের জন্মগত অধিকার। একজন ব্যক্তি তার শরীর ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে কোনো কাজ করলে তা আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অন্তর্ভুক্ত।



এ কাজ করতে গিয়ে কারো কোনো ক্ষতি হলে আইনের চোখে অপরাধ না। আইনানুযায়ী ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা অধিকার প্রয়োগকালে কোনো কাজ করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারায় আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকৃত।

কোনো ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা করতে গিয়ে যদি কারো ক্ষতি হয় তবে তা অপরাধ হবে না। কারণ, সকলেরই তার নিজের দেহ ও সম্পত্তি অন্যের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার অধিকার আছে। তবে, সে অধিকার প্রয়োগ করার নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে। আত্মরক্ষা করতে গিয়ে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। আত্মরক্ষার নামে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা আইনের চোখে অপরাধ।

আইনের ৯৭ ধারায় শরীর ও সম্পত্তির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে। ৯৯ ধারায় বর্ণিত ব্যক্তিক্রম সাপেক্ষে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের শরীর বা অপরের শরীরের ক্ষতি-সাধনকারী যে কোনো অপরাধের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে ক্ষতিসাধণকারী কাজটি একটি অপরাধ হতে হবে। আইনের দৃষ্টিতে যদি অপরাধ না হয় তবে এ ধারায় অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না।
 
এছাড়াও যে কোনো ব্যক্তি নিজের বা অপরের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিকে চুরি, দস্যুতা, অনিষ্টসাধন বা অপরাধজনক অনধিকার প্রবেশের অপরাধ বা ঐ সমস্ত অপরাধের চেষ্টা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে। দণ্ডবিধিতে বর্ণিত এসব অপরাধের হাত থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার অধিকারই আত্মরক্ষা বা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার।

দণ্ডবিধিতে আছে, যে কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না তার বিরুদ্ধেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায়। অর্থাৎ যে কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত হয় তার বিরুদ্ধেতো আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যায়ই, উপরন্তু, যে কাজ অপরাধ না ক্ষেত্রবিশেষে তার বিরুদ্ধেও আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে।

যেমন কোনো অপ্রকৃতস্ত ব্যক্তি যদি কাউকে লাঠি দিয়ে মারতে আসে। পাগল বলে তার এই কাজটি (৮৪ ধারায়) আইনে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না ঠিকই, কিন্তু সেই পথচারীটিও পাগলের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে তার ক্ষতিসাধন করতে পারবে। এক্ষেত্রে পথচারীর কাজটিও কোনো অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না।

৯৯ ধারায় ব্যক্তিগত প্রতিকারের অধিকারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।   এখানে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পাবলিক সার্ভেন্ট বা সরকারি কর্মচারি তার দপ্তরের ক্ষমতা বলে কোন কাজ সদ্ভাবে করেন বা করার উদ্যোগ নেন এবং সেই কাজের ফলে যদি কারোর যথাযথ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাত পাবার আশঙ্কা না জন্মায় তবে ঐ কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না – যদিও কাজটির মধ্যে আইনের সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকেও থাকে’।

আবার যদি কোনো সরকারি কর্মচারি তার দপ্তরের ক্ষমতাবলে সদ্ভাবে কোনো কাজ করতে নির্দেশ দেয় এবং সেই নির্দেশের বলে কোন কাজ করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয়, তবে নির্দেশটিতে আইনের সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে থাকলেও সেই কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না - যদি না সেই কাজ থেকে যথাযথ মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা জন্মায়।

যদি সরকারী কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হয়ে উপযুক্ত রক্ষামূলক প্রতিকার পাবার মত সময় থাকে, তবে সেক্ষেত্রে কোনো অপরাধমূলক কাজের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫‌১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।