ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

দ্বীন-ধর্মীয় প্রজ্ঞা লাভের উপায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৯
দ্বীন-ধর্মীয় প্রজ্ঞা লাভের উপায় মসজিদে নববীতে খুতবারত শায়খ ড. আলী বিন আবদুর রহমান হুজায়ফা

উত্তম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে সবাই চেষ্টা করে। মানুষের আকাঙ্ক্ষাও থাকে যেন ভালো অবস্থানে থাকতে পারে। কাজে-কর্মে খ্যাতি অর্জনেও থাকে সুপ্ত মনোবাসনা। আর সবাই চায় আল্লাহ তাআলা যেন জীবনযাত্রা ও প্রাসঙ্গিক সব কর্মক্ষেত্রে যেন সফলতা দান করেন।

দুর্ভাগ্য ও লাঞ্ছনা-বঞ্চনা অপছন্দ করে না এমন মানুষ নেই। কেউ চায় না ভবিষ্যতে তার পরিণতি অশুভ হোক।

প্রত্যেকেই নিজের জীবনে যাবতীয় অকল্যাণ ও অশুভ থেকে দূরে থাকতে চায়। এজন্য সে যথাসম্ভব মুক্তির পথ খুঁজে বেড়ায়।

জীবনযাত্রায় ও মৃত্যুর পরে অশুভ পরিণতি দূর করার রাস্তা একটিই রয়েছে। এছাড়া আর কোনো পথ নেই। সেটি হলো হিকমাহ বা ধর্মীয় প্রজ্ঞা ও জ্ঞান অর্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি যাকে চান তাকে প্রজ্ঞা-জ্ঞান দান করেন। আর যাকে হিকমাহ বা প্রজ্ঞা দান করা হয় তাকে এপার-ওপারের সমূহ কল্যাণ দান করা হয়েছে। জ্ঞানী ব্যক্তিরাই উপদেশ গ্রহণ করে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬৯)

হিকমাহ বা প্রজ্ঞা পাশ কাটিয়ে চলা এবং দূরে থাকার অসংখ্য পথ রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া কেউ তা গণনা করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ২১)

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘হিকমাহ-প্রজ্ঞা হলো কোরআন, ইলম ও ফিকহ। ’ ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, এ সম্পর্কে ‘কাতাদা (রা.) বলেছেন, তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তার মধ্যে যা আছে তার অনুসরণ করা। ’ সুতরাং হিকমাহ হচ্ছে অনেকগুলো অর্থ ও মর্মের সমষ্টি। যেমন শরিয়তের জ্ঞান, তদনুযায়ী আমল করা, কথাবার্তায় মাপকাঠি ঠিক রাখা, কাজেকর্মে শরিয়তের বাণীর উদ্বৃতি দেয়া। কল্যাণকামিতা সহমর্মিতা দিয়ে পরের উপকার করা, হৃদয়ের পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা করা, তার শাস্তির ভয়ে হৃদয়কে আল্লাহমুখি রাখা ইত্যাদি।

আল্লাহর কিতাব কোরআনে যেসব নির্দেশনা ও উপদেশের কথা উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোই সবচেয়ে বড় হিকমাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, তোমরা আসো, আমি তোমাদের কাছে তেলাওয়াত করব, যা আল্লাহ তোমাদের ওপর হারাম করেছেন, তোমরা তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করবে না, মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করবে, দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, আমিই তোমাদের ও তাদের জীবিকা প্রদান করি। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কোনো অশ্লীল কাজের ধারেকাছে যাবে না, আল্লাহ কর্তৃক যাকে হত্যা করা হারাম তাকে হত্যা করবে না; তবে ন্যায়সংগত হলে ভিন্ন কথা। এসবেরই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে তোমরা বোধ (হেকমত) অর্জন করতে পার। ’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৫১)

রাসুল (সা.) এর সকল সুন্নতও হিকমাহ বা প্রজ্ঞার অধিকারী মোমিনদের বাণীগুলোও হিকমাহর অন্তর্ভুক্ত। যেগুলো অন্তর বিনির্মাণ করে, চরিত্রে সমৃদ্ধি আনে। বুদ্ধি-বিবেচনাকে বিচক্ষণ করে তোলে। হৃদয়কে পবিত্র করে। এপার-ওপারের কল্যাণকর কাজে উৎসাহিত করে। সব ধরনের অনিষ্ট থেকে সতর্ক করে। প্রজ্ঞাবান মুমিনদের উপদেশের পরিধি বিশাল। এর মাঝে তাৎপর্যপূর্ণ উপদেশ হচ্ছে লুকমান হাকিমের বাণীগুলো। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর স্মরণ করুন যখন লুকমান নিজের ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, হে বৎস, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না, নিশ্চয়ই শিরক মারাত্মক অন্যায়। ’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ১৩)

হজরত লুকমান নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে আল্লাহর একত্বের নিরঙ্কুশ স্বীকৃতি দিতে উপদেশ দিয়েছেন। তাকে শিরক করতে নিষেধ করেছেন। আর এখানেই দুনিয়ার সফলতা আর আখেরাতের সুখ। এটাই সব কল্যাণের মূল। তিনি তাকে কল্যাণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। অনিষ্ট থেকে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ এর প্রতিদান দেবেন।

তিনি সন্তানকে পরিপূর্ণরূপে ও সুন্দরভাবে নামাজ কায়েম করার উপদেশ দিয়েছেন, সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় কাজের নিষেধ করতে বলেছেন। তদ্রুপ তিনি তাকে ধৈর্য ধারণ, সচ্চরিত্র গ্রহণ, নম্রতা অবলম্বন, চলাফেরা ও কথাবার্তায় ভাবগাম্ভীর্য রক্ষার উপদেশও দিয়েছেন। বিশেষ করে মা-বাবার প্রতি সদাচরণ করার কথা বলেছেন।

হজরত লুকমান তার কাজে ও বিচার-বিবেচনায় প্রজ্ঞাবানের পরিচয় দিয়েছেন। প্রজ্ঞা বা হিকমাহ একটি উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন জিনিস। আল্লাহর দয়া ও কৃপায় বান্দা লাভ করে এটি থাকেন।

হিকমাহ অর্জনের কিছু উপায় গুনাহ-অনাচার মুক্ত থাকা। দানশীলতা ও উত্তম স্বভাবের অধিকারি হওয়া। জনকল্যাণমূলক কাজ করা। মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, অন্তরে স্বচ্ছতা,হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকাও হিকমাহ লাভের উপায়। হিকমাহ বা প্রজ্ঞা লাভের মূল অবলম্বন হলো, গোপনে ও প্রকাশ্যে সব কাজে ও কথায় তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা। আল্লাহ আমাদের প্রজ্ঞা বা হিকমাহ অর্জনের তাওফিক দান করুন।

মদিনা মুনাওয়ারার পবিত্র মসজিদে নববীতে (২২ রজব ১৪৪০ হিজরি মোতাবেক ২৯ মার্চ ২০১৯) প্রদত্ত জুমার খুতবাটির সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেছেন মুহাম্মাদ আতীকুল ইসলাম

অনুবাদক: তরুণ আলেম ও শিক্ষার্থী, অনার্স ২য় বর্ষ, আরবি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।