ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

বিভিন্ন দেশে মুসলিম সংস্কৃতির বিবাহ (পর্ব- ০১)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
বিভিন্ন দেশে মুসলিম সংস্কৃতির বিবাহ (পর্ব- ০১) ভারতীয় মুসলিম সংস্কৃতির বিয়ে

পৃথিবীর সব সংস্কৃতিতেই বিবাহের অনুষ্ঠান সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতায় রকমভেদে অনুষ্ঠিত হয় বিবাহের অনুষ্ঠান। শুধু দুইজন মানুষের একত্রে বসবাসের সামাজিক স্বীকৃতি দেয়া নয়, বরং সমাজ-সভ্যতা, ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিসংশ্লিষ্ট মহার্ঘ্য একটি বিষয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায় বিভিন্ন নিয়ম-রীতিতে বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এ প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ভারত, মালয়েশিয়া, মরক্কো ও সোমালিয়ায় মুসলিম সংস্কৃতির বিবাহ অনুষ্ঠান কীভাবে হয়, সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

ভারত
ভারতে নিকাহ বা বিবাহ বিভিন্ন ইসলামী অনুষ্ঠান ও উৎসব-আয়োজনের মাধ্যমে পালন করা হয়।  মূল বিবাহ অনুষ্ঠানের আগে প্রথমে ইস্তিখারা করানো হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ব্যক্তিরা সেখানে (হুজুর-মৌলভি) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এবং বিবাহের জন্য তার আশীর্বাদ, অনুগ্রহ ও সাহায্য চাওয়া হয়। বিবাহের মূল পর্ব অবশ্যই মৌলভি, ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ এবং পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে সংঘটিত হয়।

কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর মৌলভি সাহেব বর ও কনে উভয়কেই তিনবার প্রশ্ন করেন, তারা পরস্পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি আছে কিনা। উভয়ে সম্মতি প্রকাশ করার পর, তাদের নিকাহনামা বা বিবাহচুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। এরপর তারা তাদের বয়োজ্যেষ্ঠ ও শ্রদ্ধাভাজনদের কাছ থেকে দোয়া ও আশীর্বাদ নেন। উভয়ের পরিবারের সব সদস্য পুরো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন এবং প্রত্যেকেই নিজের ভূমিকা পালন করেন। বিবাহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা নতুন দম্পতিকে প্রচুর উপহারসামগ্রী দেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে আমন্ত্রিত অতিথিদের বিশেষভাবে আপ্যায়ন করা হয়।
মালয় মুসলিম সংস্কৃতির বিবাহমালয়েশিয়া
মালয় সমাজের বিবাহ বিলাসপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হয়। তাদের বিয়েতে এশিয়ান ও ইসলামী সংস্কৃতির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। মালেশিয়ার স্থানীয় লোকজ সংস্কৃতি ও ইসলামের সংমিশ্রণে তারা বেশ শৌখিন ও বর্ণাঢ্যভাবে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রথম ধাপে এক পক্ষকে অপর পক্ষের সাথে আনু্ষ্ঠানিকভাবে (Adat Merisik and Adat Bertunang) পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে বিয়ের পরিকল্পনা এবং অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বিবাহের তিনদিন আগে বেরিনাই  নামে একটি হেনা বা মেহেদি অনুষ্ঠান করা হয়। এতে বর-বধূর হাতে মেহেদি পরানোর আয়োজন করা হয়। বর-বধূর বাড়িতে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানে পরিচিত ও আপনজনদের মাধ্যমে তাদের হাতে বিভিন্ন নকশায় মেহেদি রাঙানো হয়। মেহেদিকে মালয়রা উর্বরতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করে।

মূল বিবাহ অনুষ্ঠানটি ইমাম বা একজন কাজী পরিচালনা করেন। কোরআনের কিছু অংশ তেলওয়াতের মাধ্যমে দম্পতি বিয়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এরপর বরের পক্ষ থেকে কনেকে যৌতুক দেওয়া হয়। আর মালয়েশিয়ার সংস্কৃতিতে বরের পক্ষ থেকে নববধূকে যৌতুক দেয়া খুবই সাধারণ ও অপরিহার্য একটি বিষয়। বিয়ের পর দম্পতি ঐতিহ্যগত মালয় পোশাক পরিধান করে এবং রাজকীয় দম্পত্তির মতো তারা বিয়ের শুরুর দিন কাটায়।
মরক্কোতে মুসলিম সংস্কৃতির বিয়েমরক্কো
মরক্কোতে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন তিনদিন অব্যাহত থাকে। প্রথম দিন হলো হাম্মাম দিবস (গোসল করার জন্য কনে যেদিন গোসলখানায় যায়)। হাম্মাম ব্যবস্থা মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ গোসলখানা, যাতে সাধারণ পদ্ধতিতে গোসলের সাথে স্টিমবাথ বা বাষ্পস্নানের ব্যবস্থা রয়েছে। কনে এদিন তার বান্ধবী ও নিকটাত্মীয়দের নিয়ে গোসল করতে যায়। এর পর দিন হলো হেনা পার্টি বা মেহদি রাঙানোর উৎসব। মরক্কোতে মেহেদি শুধু উর্বরতারই প্রতীক নয়। বরং তা সৌন্দর্য ও আশার চিহ্নও। পিতার বাড়িতে কনের শেষ রাতটি হয় অত্যন্ত আবেগঘন ও মমতাপূর্ণ।  

পরদিন মূল বিবাহ অনুষ্ঠান হয়। সেদিন কনেকে মরোক্কোর ঐতিহ্যবাহী পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলঙ্কারে সাজানো হয়। কনে ও বর ‘আমারিয়া’ নামে পালকিতে বসার পর চারজন লোক তাদের বহন করে নিয়ে যায়। শেষে বিশেষ আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে বরের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সোমালিয়ায় মুসলিম সংস্কৃতির বিয়েসোমালিয়া
সোমালিয়ার সংস্কৃতিতে বিবাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সোমালিয়ায় বিবাহের মাধ্যমে শুধু দুটি মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি নয়, বরং দুটি পরিবার ও অনেকক্ষেত্রে দুটি গোত্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বিবাহের মাধ্যমে সোমালিয়ায় বিভিন্ন গোত্রের মাঝে মৈত্রীসম্পর্ক তৈরি হয়। বিয়ের সময় সোমালিয়ানরা প্রায়ই চুক্তি স্বাক্ষর করে। আর তালাকের ক্ষেত্রে বউকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পত্তি প্রদান করে।

মূল বিবাহের দিন অতিথিদের জন্য বিশেষ ঐতিহ্যবাহী প্রচুর খাবারের ব্যবস্থা ও নাচ-গানের আয়োজন করা হয়। কনের পরিবার কনেকে সংসার সাজানোর জন্য বিভিন্ন আসবাবপত্র দেয়। বিয়ের পর কনে সাধারণত স্বামীর পরিবারের সঙ্গে থাকে। তার নিজের পরিবার বরের বাড়িতে পণ্য ও আসবাবপত্র সরবরাহ করে। কনে নিজের পরিবারের নাম পরিবর্তন করে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
এমএমইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।