ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

দ্বিতীয় এলিজাবেথের শুরু থেকে শেষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২
দ্বিতীয় এলিজাবেথের শুরু থেকে শেষ

এরইমধ্যে আমরা সবাই জেনেছি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন তিনি।

অবশেষে সিংহাসনকে বিদায় জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছে ৯৬ বছর।

রানির জীবনের দিকে ফিরে তাকালে শিশু থেকে উত্তরাধিকারী হওয়া এবং সেখান থেকে ব্রিটেনের দীর্ঘ সময় ধরে রাজত্বকারী রানিকে দেখতে পাওয়া যায়। তেমনই কিছু ছবি সামনে এনেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি

একনজরে দেখে নেওয়া যাক-


১৯২৬ সালের ২১ এপ্রিল লন্ডনের বার্কলে স্কোয়ারের কাছে একটি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসর। তিনি ছিলেন ডিউক অব ইয়র্ক এবং রাজা পঞ্চম জর্জের দ্বিতীয় পুত্র আলবার্টের প্রথম সন্তান। আলবার্টের স্ত্রী ছিলেন সাবেক লেডি এলিজাবেথ বোয়েস-লিয়ন।

 


এলিজাবেথের জীবনের প্রাথমিক বছরগুলোতে ব্রিটিশ সিংহাসন তার ভাগ্য ছিল না।

 


জানা যায়, তিনি খুব অল্প বয়স থেকেই দায়িত্ববোধ দেখিয়েছিলেন।

 


এলিজাবেথ এবং ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করা তার বোন মার্গারেট রোজ, উভয়েই বাড়িতে পড়াশোনা করে শিক্ষিত হন।

 


১৯৩৬ সালে রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের পদত্যাগের পর এলিজাবেথের বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ হিসেবে রাজা হন। এরপরই ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন এলিজাবেথ।

 


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, এলিজাবেথ এবং তার বোন মার্গারেটকে উইন্ডসরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এ ছবিতে তাদের বিবিসিতে চিলড্রেনস আওয়ারের সম্প্রচারে দেখা যাচ্ছে।

 

তরুণ রাজকুমারী যুদ্ধের শেষের দিকে অক্সিলিয়ারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিস (এটিএস)-তে সংক্ষিপ্তভাবে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লরি চালানো এবং এর মেরামত কাজ শিখেছিলেন।

 


১৯৪৭ সালে নিজের দূরসম্পর্কের আত্মীয় ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনকে বিয়ে করেন এলিজাবেথ। বিয়ের পর ডিউক অব এডিনবরা উপাধি পান ফিলিপ।

 


এলিজাবেথ-ফিলিপের প্রথম সন্তান, চার্লস (ছবিতে) ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তারপরে চার্লসের বোন অ্যানের জন্ম হয় ১৯৫০ সালে।

 


এলিজাবেথ সারা জীবন তার মায়ের খুব কাছাকাছি থেকেছিলেন। এ ছবিতে তাদের ১৯৫১ সালে একটি বিবাহের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে।

 


১৯৫২ সালের জানুয়ারিতে, বাবা রাজার পক্ষ থেকে এলিজাবেথ এবং ফিলিপ বিদেশ সফরে রওনা হন। কারণ এসময় রাজা অসুস্থ ছিলেন। অবশ্য এর মাত্র কয়েকদিন পর রাজা ঘুমের মধ্যে মারা যান।

 


খবর পেয়ে এলিজাবেথ সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ফিরে আসেন। এসময় তিনি রানি হন এবং ব্রিটেনের এ নতুন রানির বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর।

 


রাজার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান। এখানে মা কুইন মেরি সন্তান ষষ্ঠ জর্জের মৃতদেহ লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার হলে শুয়ে থাকা অবস্থায় নিয়ে আসার সময় দেখছেন। রানি এলিজাবেথ তার দাদির পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন এবং রানি মা ডানদিকে আছেন।

 


এরপর ১৯৫৩ সালের জুনে এলিজাবেথকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির মুকুট পরানো হয়।

 


১৯৫৭ সালে ক্রিসমাস ডে-তে জাতিকে প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে সম্প্রচার হওয়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানান।

 


অফিসিয়াল ব্যস্ততার মধ্যেও রানি এলিজাবেথ তার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। এখানে মেয়ে প্রিন্সেস অ্যানের সঙ্গে উইন্ডসর ক্যাসেলের ফ্রগমোরে দেখা যাচ্ছে এলিজাবেথকে।

 


১৯৬৯ সালে, প্রথমবারের মতো রাজ পরিবারের ডকুমেন্টারি সম্প্রচারিত হয়। এটি রানি এবং তার পরিবারের ব্যক্তিগত ও প্রকাশ্য জীবন দর্শকদের সামনে তুলে এনেছিল।

 


প্রিন্স চার্লসকে ১৯৬৯ সালে বাকিংহাম প্যালেসে যুবরাজের মুকুট পরিয়ে দেন রানি এলিজাবেথ। এর মাধ্যমে ‘প্রিন্স অব ওয়েলস’ হয়েছিলেন চার্লস।

 


১৯৭২ সালে বিবাহের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সিলভার ওয়েডিং সেলিব্রেশনের সময় এলিজাবেথের এ ছবিটি তোলা হয়েছিল।

 


এরপর ১৯৭৭ সালে রানির সিংহাসনে আরোহণের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করে ব্রিটেন। সেসময় রানি যখন দেশটি ভ্রমণে বের হন তখন বহু উৎসাহী মানুষ তার সাথে দেখা করেছিলেন।

 


১৯৮১ সালে, এলিজাবেথের বড় ছেলে চার্লস লেডি ডায়ানা স্পেনসারকে বিয়ে করেন। বিবাহবিচ্ছেদের আগে চার্লস এবং ডায়ানার দুটি পুত্র হয়, নাম উইলিয়াম এবং হ্যারি। ডায়ানা ১৯৯৭ সালে প্যারিসে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান।

 


ক্যাসেল মেরামতের জন্য সরকারি অর্থ প্রদানের বিরুদ্ধে ছিল ব্রিটিশ জনমত। তবে ব্রিটিশ রাজপরিবার ছিল রক্ষণাত্মক এবং তহবিল সংগ্রহের জন্য বাকিংহাম প্যালেস দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেসময় বিসলের আর্মি রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনে একটি স্ট্যান্ডার্ড এসএ৮০ রাইফেল দিয়ে শেষ গুলি চালান রানি।

 


১৯৯৭ সালে ওয়েলসের রাজকুমারী ডায়ানার মৃত্যুর পর জনসমক্ষে উপস্থিত না হওয়ার জন্য রানি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অবশেষে তিনি বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং সেই দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

 


২০০২ সালে মাত্র সাত সপ্তাহের ব্যবধানে রানীর বোন, প্রিন্সেস মার্গারেট এবং তার মা রানী মাতার মৃত্যু হয়।

 


২০০৫ সালে, রানী এলিজাবেথ তার বড় ছেলেকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে দেখেছিলেন। প্রিন্স চার্লস এবং ক্যামিলা পার্কার বোলস উইন্ডসর গিল্ডহলে একটি অনুষ্ঠানে বিয়ে করেন।

 


রানি তার ৮০ তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য একটি অফিসিয়াল বক্তৃতায় বার্ধক্য সম্পর্কে গ্রোচো মার্কসের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছিলেন: যে কেউ বৃদ্ধ হতে পারে; আপনাকে যা করতে হবে তা হলো দীর্ঘকাল বেঁচে থাকা।

 


এর পরবর্তী বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আনন্দের ঘটনা হলো রানি এলিজাবেথের নাতি প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে ২০১১ সালে ক্যাথরিন মিডলটনের বিয়ে। এখানে প্রিন্স উইলিয়াম এবং তার নববধূ রানিকে সম্মান দেখাচ্ছেন।

 


২০১৬ সালের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের জন্মদিন উদযাপনের জন্য রানি রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। সেই বছরের শুরুতে তিনি ৯০ বছরে পা দেন।

 


রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল ৯৯ বছর বয়সে মারা যান। ছয় দশকেরও বেশি সময় এলিজাবেথের পাশে ছিলেন ফিলিপ। করোনা মহামারি চলাকালীন আয়োজিত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় রানির এ একাকী চিত্রটি ধারণ করা হয়।

 


দীর্ঘ জীবনে রানি এলিজাবেথ তার চার সন্তান, আট নাতি-নাতনি এবং তাদের ঘরে আরও ১২ জন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।