ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান-আফগানিস্তানের দুরান্দ সীমান্ত ‘রক্তাক্ত’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২০
পাকিস্তান-আফগানিস্তানের দুরান্দ সীমান্ত ‘রক্তাক্ত’ প্রতীকী ছবি

আফগান বাহিনী এবং তালেবানদের মধ্যে সংঘর্ষ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। সেই সঙ্গে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে আন্তর্জাতিক স্থল সীমান্ত ‘দুরান্দ রেখায়’ আফগান তালেবান এবং পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও নিয়মিতই ঘটে।

গত কয়েক সপ্তাহে তালেবানরা ইসলামাবাদের অনেক সেনাকে মেরে ফেলেছে বলে দাবি করেছে। এ কারণে খাইবার পাখতুনখোয়ার নাগরিকরা আবারও বিপদসংকেত শুনছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দাদের পুরনো প্রিয় কৌশল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এখন আরও জটিল ও বিস্তৃত হচ্ছে।

স্থানীয়দের মতে, তালেবান এবং আইএসআইএস-খোরাসান উভয়কেই স্পনসর করে বিভিন্ন টেবিলে খেলছে ইসলামাবাদ।

মার্কিন বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদের মতে এ দু’টি সংগঠন একে অপরের ‘নশ্বর শত্রু’ এবং আইএসআইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তালেবানরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে তালেবানরা পাকিস্তানে সংঘবদ্ধ হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্থানে প্রভাব বিস্তার করছে বলে একাধিকবার জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা নতুন নতুন দল গঠন করছে। সর্বশেষ ‘খাত্তাক তালেবান’ নামে নতুন একটি দল গঠন করেছে তারা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে তথাকথিত ‘শান্তি চুক্তির’ পরপরই পাকিস্তানের গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং প্রয়োজনে অন্য তালেবান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নতুন একটি জিহাদি দল গঠন করেছে। এ গোষ্ঠীকে খাত্তাক বলা হয় এবং এর সদস্যরা খাইবার পাখতুনখোয়ার (কেপিকে) সবচেয়ে দরিদ্র জেলাগুলোর অন্তর্ভুক্ত।

জাইশ-ই-মোহাম্মদ, হাক্কানি নেটওয়ার্ক এবং কখনো তালেবানরা নিজেরাই কেপিকে ও বেলুচিস্তানে এ দলগুলোকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

এরপর তাদের সরকারি সেনার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে পাঠানো হয়। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, দলগুলোর সদস্যদের প্রশিক্ষণ এতই নড়বড়ে যে তারা প্রায়ই মাছির মতো মারা যায়। দু’ সপ্তাহ আগে কমান্ডারসহ একটি ব্রিগেডের নতুন প্রশিক্ষিত ৩০ জন ‘যোদ্ধা’ মারা গেছে।

আফগানিস্তানে লড়াইয়ের জন্য পাকিস্তানের দরিদ্রদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা বলেন, ‘ওই যোদ্ধারা দক্ষিণ কেপিকের দরিদ্রতম অঞ্চলের বাসিন্দা। যদিও আমরা অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল, যেখানে গ্যাস, ইউরেনিয়াম এবং এমনকি প্ল্যাটিনাম রয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সব প্রাকৃতিক সম্পদ পাঞ্জাবরা ব্যবহার করে। স্থানীয় জনগণের জন্য কোনো চাকরি নেই। তাদের দু’টি বিকল্প রয়েছে: ফ্রন্টিয়ার কর্পসে যোগ দিয়ে বেলুচদের বিরুদ্ধে লড়াই করা বা তালেবানদের সঙ্গে যোগ দিয়ে আফগানিস্তানে লড়াই করা। ’

স্থানীয়রা বলেন, ‘আইএসআই এ বেকার লোকদের আমন্ত্রণ জানায়, তাদের ব্রেইন ওয়াশ করে, তাদের পরিবারের জন্য অর্থ, খাবার ও উপহার দেয় এবং তারপর তাদের বেলুচিস্তানের কুচলাকে নিয়ে আসে। সেনাবাহিনী তাদের ৩০ হাজার রুপি মাসিক বেতন দেয় এবং তারা তালেবানে যোগ দিলে পরিবারগুলোকে আরও ৩০ হাজার রুপি বরাদ্দ দেয়। ’

তাছাড়া, পাকিস্তান চায় না যে, আফগানিস্তানে এমন সরকার আসুক যাদের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই।

পাকিস্তান সরকারের কাছে কেপিকে এবং বেলুচিস্তানের মানুষের রক্তের তেমন কোনো মূল্য নেই। ফলে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দুরান্দ রেখা বিভিন্ন জিহাদি দলের কারখানায় পরিণত হয়েছে। ওই সীমান্তে প্রায়ই রক্তবন্যা বয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২০
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।