ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান-উ. কোরিয়ার বাইরে চীনের ‘সম্প্রসারণবাদ’ ব্যর্থ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২০
পাকিস্তান-উ. কোরিয়ার বাইরে চীনের ‘সম্প্রসারণবাদ’ ব্যর্থ 

নতুন কূটনৈতিক কৌশল ও তৎপরতা অবলম্বন করলেও কার্যত এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার বাইরে নিজেদের সম্প্রসারণবাদ কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে চীন। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ইসলামাবাদ ও পিয়ংইয়ং তাদের কৌশলের কাছে নিজেদের সঁপে দিয়েছে। 

সম্প্রতি ভারতের সিটিজেন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক লেখায় আন্দামান-নিকোবর ও পুদুচেরির সাবেক লেটফটেন্যান্ট গভর্নর ভূপিন্দর সিং চীনের সম্প্রসারণবাদী মনোভঙ্গী প্রসঙ্গে এ অভিমত দেন। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করে।

 

চীনের সম্প্রসারণবাদী মানসিকতার সমালোচনা করে ওই লেখায় ভূপিন্দর সিং বলেন, এমনকি আজও, যখন সারা পৃথিবী করোনা ভাইরাসের কোপানলে জ্বলচ্ছে, সে সময়ও চীন নিজের সম্প্রসারণবাদী মনোভঙ্গী থেকে সরে আসেনি। তাদের বাদ বাকি কৌশল আর চালাকি কী ফুরালো?          

চীনের নতুন কূটনৈতিক কৌশল ‘উল্ফ ওয়ারিয়র’র সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটি এক নির্লজ্জ সম্প্রসারণবাদী, যুদ্ধবাজ, দখলদারী, কর্তৃত্ববাদী প্রবৃত্তি। নতুন এই কূটনীতি চীনকে এ ধরনের তৎপরতা চালাতে আরো অনেক বেশি সক্রিয় করে তুলেছে।  

চীনের সমালোচনা করে ভূপিন্দর বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, পার্ল স্ট্রিং পোর্টস প্রকল্পের ফাঁদে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দ্বীপ রাষ্ট্র, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কায় কৌশলগত দখলদারী দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজের সম্প্রসারণবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।     

সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্টকে ‘লড়াকু মনোভাব’ কথাটির ওপরে জোর দিতে দেখা যায়, যা দেশটির সম্প্রসারণবাদী মানসিকতাকে তুলে করে। এ শতাব্দীকে কাঙ্ক্ষিত ‘চীনা শতাব্দী’তে পরিণত করতে তাদের এই সম্প্রসারণবাদ প্রয়োজন। এ লক্ষ্যেই চীন বহুল প্রচারিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, পার্ল স্ট্রিং পোর্টস প্রকল্প এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দ্বীপ রাষ্ট্র ও নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলংকায় কৌশলগত দখলদারীর পথে চলেছে। এছাড়া যে কোনো দেশের ঘরোয়া রাজনীতি ও অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সুযোগে চীন ঔদার্যের হাত বাড়ানোর সুযোগ খোঁজে।  

আপাত দৃষ্টিতে বিনিয়োগে এই ‘শর্তহীন’ পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমেই চীন উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। এর বাইরে যে কোনো মূল্যেই সম্প্রসারণবাদ জারি রাখতে বলপ্রয়োগ,  হুমকি, অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ ও সীমিত সামরিক লড়াই চালাতেও নজিরবিহীন তারা। নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চীন অন্যদের আমোদিত করতে, কিনে নিতে, আষ্টেপৃষ্ঠে বেড় দিয়ে ধরতে, ঋণে জড়াতে ও বাস্তবভিত্তিক রাজনীতিতে অপ্রত্যাশিত যে কোনো কিছু করতে পারে।  

  
কিন্তু চীন কী বর্তমানে যতোটা হজম করতে পারবে না, তার চেয়েও বেশি গিলে ফেলেছে? মহামারিতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও ধসে পড়া অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে আজ সারা বিশ্ব করোনা নিয়ে চাতুরি করা চীনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই সময়েও চীনা সেনাবাহিনীর যুদ্ধবাজ মানসিকতা দেশটির ব্যাপারে বিশ্বকে আরো বেশি জিজ্ঞাসু করে তুলছে।  

সাম্প্রতিক সময়ে কেবল লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাদের সাংঘর্ষিক অবস্থান নেওয়ার ইস্যুতেই নয়, নিজেদের জলসীমায় অনুপ্রবেশের মিথ্যা দোহাই দিয়ে সম্প্রতি চীন ভিয়েতনামের একটি মাছ ধরা ট্রলারও ডুবিয়ে দিয়েছে।  

এছাড়া ১৯৮৩ সালের পর সম্প্রতি, বিশ্ব যখন করোনায় জর্জরিত সেই সময়ে তারা নতুন করে বিবদমান দক্ষিণ চীন সাগরের ৮০টি দ্বীপ, প্রবালপ্রাচীরকে নিজেদের বলে দাবি করছে।  

এসবের বাইরেও সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া চীনকে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে আতঙ্ক ও বিচ্ছিন্নতার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। গত সপ্তাহেই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বিশেষ একটি দেশের বিরুদ্ধে তার দেশে বিদ্বেষপূর্ণ সাইবার যুদ্ধ চালানোর অভিযোগ তোলেন। নিঃসন্দেহে তিনি চীনের দিকে আঙুল তুলেছেন।  

এ অবস্থার মধ্যেও অনেক দেশই অর্থনীতিসহ নানা কারণে বিকল্প না পেয়ে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় চীনের কাছে নিজেদের সঁপে দিচ্ছে।  

২০১৬ সালে পাকিস্তানের ‘সিনেট স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট’র চেয়ারম্যান সতর্ক করে বলেন, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর এ অঞ্চলে আরেকটি ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ হয়ে উঠছে। আজ সেই পাকিস্তান সম্পূর্ণভাবে সমর্পিত এক রাষ্ট্র। তাদের বাকপটু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও চীনে উইগুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়নের ব্যাপারে কথা বলতে পারেন না।   

আজ শ্রীলঙ্কাও কড়ায়-গণ্ডায় চীনের বিনিয়োগ গ্রহণ করার মূল্য বুঝতে পারছে, যখন ৯৯ বছরের জন্য লিজ হিসেবে বেইজিংয়ের কাছে নিজেদের হামবানটোটা বন্দর সমর্পণ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২০ 
এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।